নিউজ ডেস্ক || কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট চুরির গুরুতর অভিযোগ তুলে ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন ঝড় তুলেছেন। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, নির্বাচন কমিশন বিজেপির সঙ্গে মিলে ভোটার তালিকায় কারচুপি করে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ফলাফল বদল করেছে। এই অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা আসন, যেখানে কংগ্রেস মাত্র ৩২,৭০৭ ভোটের ব্যবধানে (২.৫৮%) হেরেছে। রাহুলের দাবি, এই আসনে ভুয়ো ভোটার ও ডুপ্লিকেট ভোটের মাধ্যমে ফলাফল পাল্টানো হয়েছে।
রাহুল জানান, বেঙ্গালুরু সেন্ট্রালের অন্তর্গত মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি এক লাখেরও বেশি ভোটে এগিয়ে যায়, যা অন্যান্য কেন্দ্রে কংগ্রেসের লিডকে নিশ্চিহ্ন করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, এই কেন্দ্রে ১,০০,২৫০টি ভোট চুরি হয়েছে। তাঁর দাবি, ফর্ম ৬-এর অপব্যবহার, এক ঠিকানায় একাধিক ভোটার, ভুয়ো ছবি এবং একই ব্যক্তির একাধিক রাজ্যে ভোটার হিসেবে নথিভুক্তির মতো ঘটনা এই কারচুপির প্রমাণ। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ৬৮ জন ভোটারের ঠিকানা ছিল একটি বিয়ার বার, যা কংগ্রেসের তদন্ত টিম শারীরিকভাবে যাচাই করেছে।
কর্ণাটকের ২৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১৬টি জেতার আশা করলেও মাত্র ৯টি আসনে জয় পেয়েছে। রাহুলের মতে, বেঙ্গালুরু সেন্ট্রালে ফলাফলের অস্বাভাবিকতা স্পষ্ট। এই আসনে কংগ্রেস প্রার্থী মনসুর আলি খান ৬,২৬,২০৮ ভোট পেয়েছেন, আর বিজেপির পি.সি. মোহন ৬,৫৮,৯১৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
এই অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীকে চিঠি দিয়ে অভিযোগের প্রমাণসহ ঘোষণাপত্র জমা দিতে বলেছে। কর্ণাটকের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের নভেম্বর ও ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ভোটার তালিকা কংগ্রেসের হাতে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনও আপত্তি জানানো হয়নি। রাহুলকে ভুয়ো ভোটারদের নাম ও বিস্তারিত তথ্যসহ অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে, অন্যথায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য মামলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
রাহুল আরও দাবি করেন, মহারাষ্ট্রে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ১ কোটিরও বেশি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে, যা অস্বাভাবিক। হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশেও একই ধরনের কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তাঁর মতে, যদি বিজেপি আরও ২৫টি আসন হারাত, তবে তারা সরকার গঠন করতে পারত না। রাহুল বলেন, “আমাদের গণতন্ত্র আর বেঁচে নেই। এই পরিস্থিতিতে বিচারব্যবস্থার হস্তক্ষেপ জরুরি।”
বিজেপি এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, “রাহুলের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কংগ্রেস যখন হারে, তখনই কমিশনকে দোষ দেয়।” মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ রাহুলের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “তাঁর মস্তিষ্কের চিপ চুরি হয়ে গেছে।”
রাহুল গান্ধীর এই অভিযোগ ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে। তিনি জানিয়েছেন, কংগ্রেস এই বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাবে এবং প্রমাণ সামনে আনবে। এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক চলছে, এবং কর্ণাটকে কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে।