দক্ষিণ ত্রিপুরার কেনেথ চাকমা ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস পরীক্ষায় সর্বভারতীয় ১১৬তম স্থান অর্জন করে রাজ্যের গর্ব
নিউজ ডেস্ক || দক্ষিণ ত্রিপুরার শিলাছড়ি গ্রামের কেনেথ চাকমা ২০২৫ সালের ইউপিএসসি পরিচালিত ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস (আইএফওএস) পরীক্ষায় সর্বভারতীয় ১১৬তম র্যাঙ্ক অর্জন করে ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য গর্বের মুহূর্ত এনে দিয়েছেন। তিনিই এই বছর রাজ্যের একমাত্র প্রার্থী যিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পরীক্ষার চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন। কেনেথের এই অসাধারণ সাফল্য ত্রিপুরা এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সিভিল সার্ভিস প্রার্থীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জিএসআই)-তে সিনিয়র জিওলজিস্ট হিসেবে কর্মরত কেনেথের শিক্ষাগত যোগ্যতা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি মুম্বাইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) থেকে অ্যাপ্লাইড জিওলজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়াও, তিনি জিআরএফ এবং গেট পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কেনেথ আগরতলার হলিক্রস স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে বিশাখাপত্তনমের বিকাশ বিদ্যালয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করেন। নতুন দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েও তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে যোগদানের স্বপ্ন পূরণের জন্য পড়াশোনায় বিরতি নেন।
পঞ্চম প্রচেষ্টায় আইএফওএস পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেন কেনেথ। আগের চারটি প্রচেষ্টায় ব্যর্থতার মুখোমুখি হলেও তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। তার এই অধ্যবসায় এবং নিষ্ঠা তাকে এই ঐতিহাসিক সাফল্য এনে দিয়েছে। কেনেথের বাবা উত্তম কুমার চাকমা, যিনি ত্রিপুরা সরকারের সচিব এবং একজন আইএএস অফিসার, তার এই সাফল্যে গর্বিত।
কেনেথের এই অর্জন রাজ্যজুড়ে, বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশাল উৎসাহের সৃষ্টি করেছে। তার যাত্রাকে স্থিতিস্থাপকতা এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রতীক হিসেবে দেখছেন শিক্ষানুরাগী মহল। সামাজিক মাধ্যম এবং সংবাদ প্ল্যাটফর্মগুলিতে তার সাফল্যের গল্প ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা তাকে উত্তর-পূর্বের তরুণদের জন্য একজন আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আগামী সেপ্টেম্বরে কেনেথ মুসৌরির লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জাতীয় প্রশাসন একাডেমিতে ২০২৫ সালের অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস অফিসারদের ব্যাচে ফাউন্ডেশন কোর্সে যোগ দেবেন। এরপর তিনি দেরাদুনের ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় বন একাডেমিতে বনায়ন এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন।
কেনেথ চাকমার এই সাফল্য শুধু তার পরিবার বা ত্রিপুরা রাজ্যের জন্যই নয়, বরং সমগ্র উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার এই যাত্রা প্রমাণ করে যে, ভৌগোলিক বা অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা দৃঢ় সংকল্প এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।