দ্বিতীয় জাতীয় মহাকাশ দিবস: চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের স্মরণে ভারতের মহাকাশ যাত্রার উদযাপন
নিউজ ডেস্ক || ভারত আজ দেশজুড়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে দ্বিতীয় জাতীয় মহাকাশ দিবস উদযাপন করেছে। এই দিনটি ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট চন্দ্রযান-৩ মিশনের ঐতিহাসিক সাফল্য—চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বিক্রম ল্যান্ডারের সফট ল্যান্ডিং এবং প্রজ্ঞান রোভারের চন্দ্র পৃষ্ঠে অভিযানের স্মরণে পালিত হয়। এই অভূতপূর্ব কৃতিত্বের মাধ্যমে ভারত বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদে সফট ল্যান্ডিং এবং প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছানোর গৌরব অর্জন করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দিনটিকে “জাতীয় মহাকাশ দিবস” হিসেবে ঘোষণা করেন এবং ল্যান্ডিং স্থানের নাম রাখেন ‘শিব শক্তি পয়েন্ট’, যা আজ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এ বছরের মহাকাশ দিবসের থিম—“আর্যভট্ট টু গগনযান: এনসিয়েন্ট উইজডম টু ইনফাইনাইট পসিবিলিটিজ”—প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গে আধুনিক মহাকাশবিজ্ঞানের এক অপূর্ব সংযোগ স্থাপন করেছে। এটি আর্যভট্টের যুগ থেকে গগনযান মিশন পর্যন্ত ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে তুলে ধরে। এই উপলক্ষে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) নয়াদিল্লিতে ন্যাশনাল স্পেস মিট ২.০-এর আয়োজন করে। এই বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রক, রাজ্য সরকার, গবেষণা সংস্থা, স্টার্টআপ এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। দশটি সেশনে শতাধিক বিশেষজ্ঞ আগামী দশকের জন্য মহাকাশ প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব পি. কে. মিশ্র সমাপনী বক্তৃতায় বলেন, “মহাকাশ অন্বেষণ কেবল নক্ষত্র স্পর্শ করা নয়, এটি মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনার একটি মাধ্যম। মহাকাশ নীতির সংস্কারের মাধ্যমে ভারত প্রযুক্তিগত বিপ্লবের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। ২০১৪ সালে যেখানে মাত্র ২টি স্পেস স্টার্টআপ ছিল, আজ তা ৩৫০-এর বেশি।” তিনি কৃষি, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মহাকাশ প্রযুক্তির ভূমিকার উপর জোর দেন। ইসরো চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন বলেন, “১৯৬৩ সালে থুম্বা থেকে শুরু হওয়া যাত্রা আজ বিশ্ব নেতৃত্বের শিখরে পৌঁছেছে। বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের মাধ্যমে ‘বিকসিত ভারত ২০৪৭’-এর লক্ষ্য অর্জনে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করব।”
দেশজুড়ে স্কুল, কলেজ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং মহাকাশ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিতে প্রদর্শনী, ওয়ার্কশপ এবং শিক্ষামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি (পিআরএল)-এর আহমেদাবাদ, উদয়পুর ও মাউন্ট আবু ক্যাম্পাসে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপিত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘এক্স’-এ লেখেন, “জাতীয় মহাকাশ দিবসে প্রতিটি ভারতীয় গর্বিত। চন্দ্রযান-৩-এর ঐতিহাসিক সাফল্য ইসরোর বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফসল। প্রধানমন্ত্রী মোদীজির নেতৃত্বে ভারত নতুন মহাকাশ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। চন্দ্রযান-৩ থেকে আদিত্য মিশন—ইসরো ভারতীয় স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে।”
জাতীয় মহাকাশ দিবস শুধু অতীতের গৌরবের স্মরণ নয়, এটি ভবিষ্যতের বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রযুক্তিনির্ভর ভারতের প্রতিশ্রুতি। প্রাচীন জ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধনে ভারত আজ মহাকাশ অন্বেষণে বিশ্বে এক দৃঢ় অবস্থান গড়ে তুলেছে।