নিউজ ডেস্ক || প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নয়াদিল্লির ভারত মণ্ডপমে ‘রাইজিং নর্থ ইস্ট ইনভেস্টরস সামিট ২০২৫’-এর উদ্বোধন করেন। এই সম্মেলন উত্তর-পূর্ব ভারতকে বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্যে আয়োজিত হয়েছে, যেখানে শিল্পপতি, নীতিনির্ধারক এবং স্টেকহোল্ডাররা একত্রিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্বের সম্ভাবনার প্রশংসা করে বলেন, এই অঞ্চল ভারতের বৈচিত্র্যের প্রতীক এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত।
প্রধানমন্ত্রী জানান, উত্তর-পূর্ব ভারতের বৈচিত্র্য তার সবচেয়ে বড় শক্তি। এই অঞ্চল জৈব-অর্থনীতি, বাঁশ শিল্প, চা উৎপাদন, পেট্রোলিয়াম, ক্রীড়া, দক্ষতা উন্নয়ন এবং পর্যটনের ক্ষেত্রে অগ্রগামী। তিনি বলেন, “উত্তর-পূর্ব অষ্টলক্ষ্মীর প্রতীক, যা সমৃদ্ধি ও সুযোগের প্রতিনিধিত্ব করে।” তিনি আরও জানান, গত ১১ বছরে এই অঞ্চলে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে, যা শুধু পরিসংখ্যানে নয়, বাস্তবে দৃশ্যমান।
মোদী উত্তর-পূর্বকে ‘বিকশিত ভারত’-এর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “ইস্ট শুধু দিক নয়, এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গি—এমপাওয়ার, অ্যাক্ট, স্ট্রেংথেন, ট্রান্সফর্ম।” গত দশকে এই অঞ্চলে ১১,০০০ কিলোমিটার হাইওয়ে, নতুন রেললাইন, দ্বিগুণ বিমানবন্দর, ব্রহ্মপুত্র ও বরাক নদীতে জলপথ এবং ১,৬০০ কিলোমিটার গ্যাস গ্রিডের মতো অবকাঠামো প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই অবকাঠামো শিল্পের জন্য ‘ফার্স্ট মুভার অ্যাডভান্টেজ’ তৈরি করছে।
প্রধানমন্ত্রী ভারত-মায়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক মহাসড়ক এবং কলকাতা থেকে মিয়ানমারের সিটওয়ে বন্দর পর্যন্ত কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা উত্তর-পূর্বকে আসিয়ান বাজারের প্রবেশদ্বার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। তিনি গুয়াহাটি, ইম্ফাল ও আগরতলাকে মাল্টি-মোডাল লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার কথাও জানান।
পর্যটনের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সঙ্গীত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য আদর্শ। তিনি ‘হিল ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই অঞ্চলকে স্বাস্থ্য ও ওয়েলনেস পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবে প্রচার করেন। তিনি আরও বলেন, শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকারের কঠোর নীতির ফলে গত ১০-১১ বছরে ১০,০০০-এর বেশি যুবক সন্ত্রাস ত্যাগ করে শান্তির পথে ফিরেছেন।
শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে ২১,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ, ৮০০ নতুন স্কুল, এআইআইএমএস, নয়টি মেডিকেল কলেজ, দুটি আইআইআইটি এবং মিজোরামে ভারতীয় গণযোগাযোগ ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাস স্থাপনের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, উত্তর-পূর্বের যুবকরা শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নয়, ডিজিটাল উদ্ভাবক হিসেবেও উঠে আসছেন।
জৈব খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা উল্লেখ করে মোদী বলেন, উত্তর-পূর্বের চা, আনারস, কমলালেবু, হলুদ ও আদা বিশ্ববাজারে জনপ্রিয়। তিনি তেল পাম মিশনের মাধ্যমে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি ও ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর উপর জোর দেন।
শক্তি ও সেমিকন্ডাক্টর খাতে উত্তর-পূর্বের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসমে ভারতের প্রথম সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরির কারখানা শীঘ্রই উৎপাদন শুরু করবে। তিনি জলবিদ্যুৎ ও সৌরশক্তি প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের কথাও উল্লেখ করেন।
দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন (২৩-২৪ মে) পর্যটন, কৃষি-খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, টেক্সটাইল, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, শক্তি এবং ক্রীড়া খাতে বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরবে। মন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশন, বিজনেস-টু-গভর্নমেন্ট ও বিজনেস-টু-বিজনেস বৈঠক, স্টার্টআপ এবং প্রদর্শনী এই সম্মেলনের মূল আকর্ষণ।
এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য এম. সিন্ধিয়া, মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা, নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাইজিং নর্থ ইস্ট শুধু একটি সম্মেলন নয়, এটি একটি আন্দোলন।” তিনি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে উত্তর-পূর্বের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ভারতের উন্নয়নের পথে অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান।