নিউজ ডেস্ক ।। ত্রিপুরার কৃষি ও হর্টিকালচার খাতে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। কৃষি, সমাজ ও সংস্কৃতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত এই খাত আজ কৃষকদের অতিরিক্ত আয়, স্বাবলম্বন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতীক হয়ে উঠেছে। রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতনলাল নাথ জানিয়েছেন, বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কৃষি ও উদ্যানবিদ্যার উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “কৃষক না বাঁচলে সমাজ বাঁচবে না।” এই দর্শনকে সামনে রেখে সরকার পরিকল্পিতভাবে কাজ করে চলেছে।
মন্ত্রী অভিযোগ করেন, ৩৪ বছরের বাম শাসনে কৃষি ও হর্টিকালচার খাত ছিল সম্পূর্ণ অবহেলিত। তৎকালীন সরকারের উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের গরিব রেখে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা। তবে বিজেপি জোট সরকারের আমলে এই চিত্র বদলে গেছে। রতনলাল নাথের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাম আমলে ফল চাষ হতো মাত্র ৫,২৫৩ হেক্টর জমিতে, যেখানে কৃষক সংখ্যা ছিল ৮,০৪৮। মাত্র সাত বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫,১৫৭ হেক্টর জমি এবং ২৩,৮২৩ জন কৃষক। এটি শুধু পরিসংখ্যান নয়, কৃষি খাতে এক বিপ্লবের দলিল।
উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, বাম আমলে সুপারি চাষ হতো মাত্র ৯০ হেক্টর জমিতে, যা এখন বেড়ে হয়েছে ৪,৮৪৮ হেক্টর। নারকেল চাষ ১৭ হেক্টর থেকে বেড়ে ১,১১৯ হেক্টরে পৌঁছেছে। কাজু বাদাম চাষ, যা আগে ছিল না, তা এখন ৬৬ হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে। আনারস চাষ ১,৮৪৫ হেক্টর থেকে বেড়ে ৬,০২৭ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে, এবং ‘স্ট্যাগারিং পদ্ধতিতে’ সারা বছর ধরে চাষ হচ্ছে ৬,০২৪ হেক্টর জমিতে। কাঁঠাল চাষ এখন বাণিজ্যিকভাবে ৪৮৫ হেক্টর জমিতে শুরু হয়েছে। লেবু চাষ ৬,২১৩ হেক্টরে, ড্রাগন ফল ১,০৩৬ হেক্টরে এবং আপেল কুল ২৮১ হেক্টরে সম্প্রসারিত হয়েছে। হাইব্রিড সবজি চাষ ৮,৯৯৪ হেক্টর থেকে বেড়ে ২২,৪০৪ হেক্টরে পৌঁছেছে। ফুল চাষে ৪৯৯ জন কৃষক প্রটেক্টেড স্ট্রাকচারের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছেন। মশলা ও তেলজাত ফসলেও উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, “কৃষিকে আমরা গৌরবের পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকদের সরাসরি লাভবান করা হচ্ছে।” ত্রিপুরার কৃষি আজ আর ধান বা আলুতে সীমাবদ্ধ নয়। ফল, ফুল, মসলা, সুপারফুড—সব মিলিয়ে কৃষকদের জীবনে এসেছে বৈচিত্র্য ও সম্ভাবনা। এই সাফল্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, এক সামাজিক পুনর্জাগরণের সূচনা। রতনলাল nath দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “আমরা চাই কৃষকের সন্তান গর্ব করে বলুক, আমার বাবা একজন কৃষক।” ত্রিপুরার কৃষি ও হর্টিকালচার খাতের এই অগ্রগতি আগামী দিনে রাজ্যের ভবিষ্যৎ নির্মাণে এক মজবুত ভিত্তি হয়ে উঠবে।