সন্তোষ পাল || অসমের প্রিয় সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গার্গের আকস্মিক মৃত্যুতে গোটা রাজ্য ও উত্তর-পূর্ব ভারত শোকের ছায়ায় ডুবে গেছে। ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিনি প্রাণ হারান। সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় লাইফ জ্যাকেট ছাড়া ডুবে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই অসমের মানুষ স্তব্ধ হয়ে পড়ে, এক অমূল্য সাংস্কৃতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, জুবিন গার্গের পরিবার ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর কামারকুচি (সোনাপুর সাব-ডিভিশন) তাঁর শেষকৃত্যের স্থান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডঃ রনোজ পেগু ২১ সেপ্টেম্বর তিনটি সম্ভাব্য স্থান—নাজিরাখাট, বারখাট ও হাতিমুরা—পরিদর্শন করেন। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি তদারকি করেন। অবশেষে, কামারকুচিকে চূড়ান্ত স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
২১ সেপ্টেম্বর সকালে জুবিনের মরদেহ দিল্লি থেকে গুয়াহাটি বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ফুল, গামোছা ও শ্রদ্ধাবার্তায় সজ্জিত কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্স কাহিলিপাড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পথে হাজার হাজার ভক্ত ফুল, পোস্টার ও গামোছা নিয়ে তাঁদের প্রিয় ‘জুবিন দা’র শেষ দর্শনের জন্য অপেক্ষা করেন। কাহিলিপাড়ায় পৌঁছে তাঁর স্ত্রী গরিমা সাইকিয়া গার্গ কান্নায় ভেঙে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা শ্রদ্ধা জানান।
মরদেহ পরে সারুসজাইয়ের অর্জুন ভোগেশ্বর বড়ুয়া ক্রীড়া কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভক্তরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ভিড়ে অসুস্থ হয়ে কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজের একটি মেডিকেল দল মরদেহ পরীক্ষা করছে। মরদেহ সংরক্ষণযোগ্য হলে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বাড়তে পারে, অন্যথায় সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালের আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত জানান, জুবিন সিঙ্গাপুরে সাংস্কৃতিক সংযোগ স্থাপন ও বিশ্রামের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর শোকবার্তায় জুবিনের অবদানের প্রশংসা করেন। তবে, মণিপুরের সাংসদ বিমল আকোজাম প্রশ্ন তোলেন, মণিপুরের নাট্যকার রতন থিয়ামের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে, যা উত্তর-পূর্বে বৈষম্য বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে।
জুবিন গার্গ ছিলেন অসমের সাংস্কৃতিক আত্মা। তাঁর গান ও প্রতিবাদী কণ্ঠ লাখো মানুষের হৃদয়ে আলো জ্বালিয়েছে। কামারকুচিতে তাঁর শেষকৃত্য হবে এক ঐতিহাসিক বিদায়, যেখানে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার মিলন ঘটবে। জুবিন দা অসমের হৃদয়ে চিরজাগ্রত থাকবেন।