নিউজ ডেস্ক || আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে শুরু হওয়া যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা। তবে, এই বৈঠক যদি সফল না হয়, তাহলে ভারতের উপর আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট। বুধবার ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট বলেন, “রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য আমরা ভারতের উপর দ্বিতীয় দফায় শুল্ক চাপিয়েছি। আলাস্কার বৈঠকে পরিস্থিতি ভালো না গেলে শুল্ক আরও বাড়তে পারে।”
ট্রাম্প ইতিমধ্যে ভারতের ওপর রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা চীনের চেয়ে ২০ শতাংশ এবং পাকিস্তানের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেশি। ৭ আগস্ট তিনি অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যার ফলে মোট শুল্কহার ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ভারত রাশিয়ার তেল কিনে “যুদ্ধ মেশিনকে জ্বালানি দিচ্ছে”। তিনি রাশিয়াকেও সতর্ক করে বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ না হলে “চরম পরিণতি” ভোগ করতে হবে।
এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপে শান্তি প্রচেষ্টায় ভারতের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। মোদি বলেন, “যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ ও দ্রুত সমাধানের জন্য ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি জেলেনস্কির শান্তি প্রচেষ্টায় সমর্থনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারতের সামর্থ্য অনুযায়ী ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির হুমকির জবাবে মোদি স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভারত কৃষক, জেলে এবং দুগ্ধচাষীদের স্বার্থে কোনো আপোস করবে না, এমনকি অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখেও। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুল্ক বৃদ্ধিকে “অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য” বলে সমালোচনা করেছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের জ্বালানি আমদানি বাজারনির্ভর এবং ১.৪ বিলিয়ন মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এর প্রধান লক্ষ্য। ভারত আরও উল্লেখ করেছে, যারা তাদের সমালোচনা করছে, তারা নিজেরাও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হলেও, এটি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করছে। ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ২০২২ সালের তুলনায় বেড়ে এখন মোট আমদানির ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আলাস্কার বৈঠকের ফলাফল শুধু ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎই নির্ধারণ করবে না, বরং ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সমীকরণেও নতুন মোড় আনতে পারে। ভারত এই বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে, তবে জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে তার অবস্থান অটল।