নিউজ ডেস্ক || ত্রিপুরায় এইচআইভি/এইডস রোগের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজ্যে প্রতি মাসে গড়ে ১২০ জন এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে মোট ৫,০০০-এর বেশি এইডস রোগী রয়েছেন, যার মধ্যে ১,০০০-এরও বেশি মহিলা। এছাড়া সমকামী ব্যক্তিরাও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ২,০৪,১৮০ জনের এইডস পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে ১,৪০০ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া গেছে। গত দুই মাসে ৪০,০৫২ জনের পরীক্ষায় ৩০০ জনের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে।
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ত্রিপুরা বিধানসভার লবিতে ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এইচআইভি/এইডস বিষয়ক জনসচেতনতামূলক আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। এই আলোচনায় রাজ্য বিধানসভার সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলিতে সেক্স এবং ড্রাগস শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান। তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট করার ওপর জোর দেন এবং এইডস প্রতিরোধে ফান্ড গঠনের জন্য বিধায়ক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে এক লক্ষ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি, হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের এইডস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিও তুলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করে বলেন, শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যালয়ে সেক্স এবং ড্রাগস শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। এইডস প্রতিরোধে ফান্ড গঠনের বিষয়েও তিনি আশ্বাস দেন। তবে, হাসপাতালে রোগীদের অনুমতি ছাড়া এইডস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। যুব সমাজকে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক কাজে যুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি। এক্ষেত্রে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত, সাংসদ এবং অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সমাজ যত সুস্থ থাকবে, মানবজীবন তত সুস্থ ও সবল হবে।”
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির বাংলা, ককবরক ও ইংরেজি ভাষায় প্রণীত ১৫টি নতুন আইইসি ম্যাটেরিয়ালের সূচনা করেন। আলোচনায় অংশ নেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রতনলাল নাথ, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিছু রায়, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, গোপাল রায়, বীরজিৎ সিনহা প্রমুখ। এইডস রোগের বিস্তার ও প্রতিরোধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন সিএসটি এন্ড আইটি এবং এনএসিও’র এডিজি ডা. চিন্ময়ী দাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রনজিৎ সিংহরায়, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, বিধানসভার সরকার পক্ষের মুখ্যসচেতক কল্যাণী সাহা রায়, ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশের ডিজি অনুরাগসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন টিএমএসিএস’র প্রজেক্ট ডিরেক্টর ডা. সমর্পিতা দাস।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এইডস একটি মারণ ব্যাধি। রাজ্য সরকার এই রোগ প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে।” তিনি যুব সমাজকে সচেতন করার পাশাপাশি রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।