নিজস্ব প্রতিনিধি || জম্পুই জলা ব্লকের দুর্গম পার্বত্য এলাকা থেলাখুং ভিলেজের ৩ নং কলোনি পাড়ায় অবস্থিত এক অসহায় পরিবারের দুই দিব্যাঙ্গ সন্তানের প্রতি সহানুভূতি জাগিয়ে তুলেছেন স্থানীয় সাংবাদিক জ্যোতির্ময় সাহা। শুক্রবার সকাল ১১টায় চড়িলাম থেকে রওনা হয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উঁচু-নিচু টিলাভূমি ও পাহাড়ি রাস্তা অতিক্রম করে বেলা ২টায় তিনি সেই পরিবারের বাড়িতে পৌঁছে যান। পরিবারটির দুই মেয়ে সোমা কলই (১২) এবং রুমা কলই (১৩)-এর হৃদয়বিদারক অবস্থা দেখে সাংবাদিকের মনে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।
পরিবারটির বাবা মুক্তা রাই কলই এবং মা শ্যাম পারি কলই-এর কথা জানা গেছে, তাদের দুই সন্তান জন্মের দুই বছর পর হঠাৎ করে দিব্যাঙ্গ হয়ে যায়। তারা না কথা বলতে পারে, না কানে শোনে, এমনকি নিজেরা কোনো কাজ করতে অক্ষম। রুমা বিবস্ত্র অবস্থায় একটি ভাঙা মাটির কুয়াটার মধ্যে বসে অনবরত মাটি খুঁড়ে যাচ্ছিলেন, যখন সোমা জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় বিছানায় শয়ন করছিলেন। বাবা-মা দিনভর বনে শুকনো লাঠি ও বাঁশের কুড়ুল সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ককবরক ভাষায় তারা তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা খুলে বলেন, যা বাংলায় অনুবাদ করলে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। পরিবারটি অন্তর্দ্যীপীয় সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত, এবং দুবেলা ভাতের সংস্থান করতে হয় অক্লান্ত পরিশ্রমে।
বহুবার বিশ্রামগঞ্জ সিপাহীজলা জেলা দিব্যাঙ্গ পুনর্বাসন কেন্দ্রে গিয়েও তারা মেয়েদের দিব্যাঙ্গ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারেননি। এলাকার বিজেপি বিধায়ক রাম পদ জমাতিয়া, ত্রিপুরা উপজাতি স্বশাসিত জেলা পরিষদের সিইএম পূর্ণচন্দ্র জমাতিয়া সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পরিবারটির প্রতি কোনো খোঁজখবর নেননি। এই অভাবের মধ্যে যদি বাবা-মায়ের মৃত্যু হয়, তাহলে দুই দিব্যাঙ্গ বোনের ভবিষ্যৎ কী হবে—এ নিয়ে গোটা এলাকার মানুষ চিন্তিত। তারা একে অপরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, যেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘মহেশ’-এর গফুর চরিত্রের মতো নির্বাক দুঃখের প্রতিমূর্তি।
সাংবাদিক জ্যোতির্ময় সাহা পরিবারের পিতামাতার হাতে সাধ্যমতো খাদ্যসামগ্রী এবং আর্থিক সাহায্য তুলে দেন। তিনি রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী টিঙ্কু রায়, স্থানীয় বিধায়ক রাম পদ জমাতিয়া এবং সিইএম পূর্ণচন্দ্র জমাতিয়াকে আবেদন জানান, যাতে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো হয় এবং দুই মেয়ের ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। এতে পরিবারটি উপকৃত হবে এবং সরকার-প্রশাসনের প্রতি আস্থা ফিরে আসবে। এলাকার অনেকেই বলছেন, সমাজকল্যাণ দপ্তরের প্রথম তালিকায় এই পরিবারের নাম থাকা উচিত ছিল। সাংবাদিক সাহা জানিয়েছেন, তিনি ভবিষ্যতেও পরিবারটির পাশে থাকবেন। জম্পুই জলা ব্লকের এমন দুস্থ নিরীহ পরিবার আর দ্বিতীয় নেই।