নিউজ ডেস্ক || ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ মে যেখানে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০১০, তা মাত্র পাঁচ দিনে লাফিয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৯৫-এ। এই সময়ে নতুন করে ২৩৮৫ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে—অরুণাচল প্রদেশ, অসম এবং মিজোরামে—করোনার উপস্থিতি উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, কেরালা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় আক্রান্তের রাজ্য হিসেবে রয়েছে, যেখানে ১৩৩৬ জন সংক্রমিত। এরপর রয়েছে মহারাষ্ট্র (৪৬৭), দিল্লি (৩৭৫), গুজরাট (২৬৫), পশ্চিমবঙ্গ (২০৫), তামিলনাড়ু (১৮৫), কর্ণাটক (২৩৪), উত্তর প্রদেশ (১১৭) সহ অন্যান্য রাজ্য। তবে সিকিম, লাদাখ, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, হিমাচল প্রদেশ, আন্দামান-নিকোবর, দাদরা নগর হাভেলি ও দমন এবং লাক্ষাদ্বীপে এখনও কোনও সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি।
গত পাঁচ দিনে কেরালায় সর্বাধিক ৭১৭ জনের দেহে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এছাড়া মহারাষ্ট্রে ২১৪, দিল্লিতে ১৯০, গুজরাটে ১৪০ এবং কর্ণাটকে ১০১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ে মহারাষ্ট্রে দুজন, কেরালা, দিল্লি, গুজরাট, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকে একজন করে মোট আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, সম্প্রতি ভারতে দুটি নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্ট—এনবি.১.৮.১ এবং এলএফ.৭—সনাক্ত হয়েছে। তামিলনাড়ুতে এনবি.১.৮.১-এর একটি এবং গুজরাটে এলএফ.৭-এর চারটি কেস ধরা পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্টগুলিকে ‘পর্যবেক্ষণাধীন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ভারতে জেএন.১ ভ্যারিয়েন্ট এখনও সবচেয়ে প্রভাবশালী (৫৩%), এরপর রয়েছে বিএ.২ (২৬%)।
দেশজুড়ে আইসিএমআর এবং আইডিএসপি-এর মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অসুস্থতার নজরদারি চলছে। বেশিরভাগ আক্রান্তের ক্ষেত্রে হালকা উপসর্গ দেখা গেছে, এবং তারা বাড়িতে একান্তবাসে রয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রক হাসপাতালগুলিকে ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর প্রস্তুত রাখতে এবং পজিটিভ নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
দিল্লিতে ৬০ বছর বয়সী এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে, যিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য জটিলতায় ভুগছিলেন। মহারাষ্ট্রে ৬৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এবং ২১ বছরের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে, যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। কর্ণাটকে ৭০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এবং তামিলনাড়ুতে ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, যাঁরা দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জনগণকে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।