নিউজ ডেস্ক || মাদকাসক্তি এবং বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। আজ বামুটিয়া ব্লকের গান্ধীগ্রাম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘নেশামুক্ত ভারত অভিযান ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ’ বিষয়ক মেগা সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিরা শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে নানা কার্যক্রমে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মাদকাসক্তি সমাজের মানবসম্পদ ধ্বংস করে। কিছু অসাধু ব্যক্তি অবৈধ অর্থ উপার্জনের লোভে ত্রিপুরাকে ড্রাগস পাচারের করিডর হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। তবে, রাজ্য সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।” তিনি জানান, এই নীতির ফলে রাজ্যে ড্রাগস বাজেয়াপ্ত ও পাচারকারীদের গ্রেপ্তারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “অবৈধ ড্রাগস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষার্থী ও যুব সমাজকে মাদকাসক্তি, বাল্যবিবাহ এবং এইডসের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি বিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করার এবং শিশুদের আচরণের প্রতি নজর রাখার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক বিষয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রাজ্য সরকার কাজ করছে। শিক্ষার্থীদের শুধু ভালো ফলাফল নয়, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করে ভালো মানুষ হতে হবে।”
অনুষ্ঠানে অবৈধ ড্রাগস ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক শ্লোগান এবং বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী ৬ জন শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার ও শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া, টি.বি.এস.ই এবং সি.বি.এস.ই বোর্ড পরীক্ষায় পশ্চিম জেলায় সেরা ফলাফল করা ৬ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়। পাশাপাশি, জেলার ৪টি স্ব-সহায়ক দলের হাতে ১২ লক্ষ টাকার ঋণের চেক তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা রামকৃষ্ণ মিশনের সহ-সম্পাদক বুদ্ধিরূপানন্দজি মহারাজ, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ঝর্ণা দেববর্মা, ত্রিপুরা চাইল্ড প্রোটেকশন কমিশনের চেয়ারম্যান জয়ন্তী দেববর্মা, বামুটিয়া পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান দীপক কুমার সিনহা, প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণধন দাস এবং পশ্চিম জেলার এস.পি. কিরণ কুমার কে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি বিশ্বজিৎ শীল এবং ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ডা. বিশাল কুমার।
মুখ্যমন্ত্রী ড্রাগস, বাল্যবিবাহ, এইডস এবং টিবি প্রতিরোধে পাড়ায় পাড়ায় সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করে এটিকে একটি গণআন্দোলনের রূপ দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনে রাজ্য সরকার দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করছে।”
এই অনুষ্ঠান ত্রিপুরায় নেশামুক্ত ভারত গঠন এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এই লড়াইয়ে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে।