আগরতলা || রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নে পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে সারা দেশের মধ্যে রাজ্যের পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থা একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে।
পঞ্চায়েতস্তরে উল্লেখযোগ্য কাজের সাফল্যের স্বীকৃতি হিসাবে ত্রিপুরা ৭টি জাতীয় পঞ্চায়েতীরাজ পুরস্কার পেয়েছে। রাজ্যের সামগ্রিক বিকাশ হচ্ছে বলেই দেশের প্রায় আড়াই লক্ষ পঞ্চায়েতের মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন পঞ্চায়েত জাতীয়ন্তরের পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। আজ গ্রামোন্নোয়ন (পঞ্চায়েত) দপ্তরের উদ্যোগে আগরতলা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান ও রাজ্যের বিভিন্ন পঞ্চায়েতের মধ্যে কম্পিউটার প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে বর্তমান ডিজিটাল যুগে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে কম্পিউটার ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ‘ডিজিটাল পঞ্চায়েত, শক্তিশালী পঞ্চায়েত’ গঠন করা। অর্থনৈতিক লেনদেন, রেকর্ড সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজগুলি সহজ উপায়ে করার জন্য সরকার ই-গভর্ন্যান্সের উপর বিশেষভাবে জোর দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ইন্ডিয়ার শ্লোগানকে শক্তিশালী রূপ দিতে রাজ্যের প্রতিটি পঞ্চায়েতকে ই-অফিস ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করা হয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি পঞ্চায়েতে পি এফ এম এস ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেন করা হচ্ছে। স্বচ্ছ পঞ্চায়েত ব্যবস্থাপনার ভিত্তি হিসাবে পঞ্চায়েতগুলির পরিকল্পনা অনলাইন পোর্টালেও লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থাপনা পরিচালনার ক্ষেত্রে সারা দেশের কাছে ত্রিপুরা আজ রোল মডেল হয়ে উঠেছে।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশনায় দেশের পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এসেছে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশে পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণকে প্রাধান্য দিয়ে বাস্তবধর্মী কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। এই পরিকল্পনার নাম দেওয়া হয়েছে জন পরিকল্পনা কর্মসূচি বা পিপল প্ল্যান ক্যাম্পেইন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সাল থেকে রাজ্যে পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। বিভিন্ন নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং তা বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতি ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার পঞ্চায়েত ডিভেলিওশন ইন্ডেক্স নিয়ে রাজ্যগুলির উন্নতির উপর পর্যালোচনা করে থাকে। এই বছর সারা দেশের পঞ্চায়েত ডিভেলিওশন ইন্ডেক্স রিপোর্টে ত্রিপুরা প্রথম ১০টি রাজ্যের মধ্যে সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং স্থায়ী সম্পদ তৈরির মাধ্যমে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে সাজিয়ে তোলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী জনপ্রতিনিধিদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি রাজ্যের সবগুলো পঞ্চায়েতকে আদর্শ শিশু বান্ধব এবং মহিলা বান্ধব পঞ্চায়েত হিসাবে গড়ে তোলার জন্যও মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণের সমস্যাগুলি নিরসনে রাজ্যে ‘আমার সরকার’ পোর্টাল চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি চিফ মিনিস্টার কনক্লেভে ‘আমার সরকার’ পোর্টালের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন। ত্রিপুরায় এই পোর্টালের সঠিক বাস্তবায়নের ফলে দেশের অনেক রাজ্য ‘আমার সরকার’ পোর্টাল তাদের রাজ্যে চালু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছে। সরকারি পরিষেবাগুলি আরও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই ৪৭৫টি পঞ্চায়েতে কম্পিউটার প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি সহ সর্বস্তরের কর্মচারিদের দক্ষতা বৃদ্ধির উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পঞ্চায়েতের কাজকর্ম পরিচালনা এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ণের লক্ষ্যে সম্প্রতি ৩৬১ জন পঞ্চায়েত এক্সিকিউটিভ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে পঞ্চায়েত দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং বলেন, রাজ্যের পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থায় বর্তমানে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। রাজ্যের এই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে রাজ্যের ৮টি জেলার জিলা পরিষদের সভাধিপতিগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পঞ্চায়েত স্বশক্তিকরণে জাতীয়স্তরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত গোমতী জেলা, অমরপুর পঞ্চায়েত সমিতি, অমরপুর ব্লকের থাকছড়া গ্রাম পঞ্চায়েত, রাজকাঙ ভিলেজ কমিটি, দেববাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত, রূপাইছড়ি ব্লকের দক্ষিণ মনুবনকুল ভিলেজ কমিটি এবং কুমারঘাট ব্লকের বেতছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতকে সম্মানিত করা হয়। একইসঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী পঞ্চায়েতগুলোকেও পুরস্কৃত করা হয়। দীনদয়াল উপাধ্যায় পঞ্চায়েত সতত বিকাশ পুরস্কার ২৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং এডিসি ভিলেজের মধ্যে প্রদান করা হয়। নানাজি দেশমুখ সর্বোত্তম পঞ্চায়েত সতত বিকাশ পুরস্কার জেলাস্তরে গোমতী জেলা, পশ্চিম জেলা এবং টিটিএএডিসি-কে পুরস্কৃত করা হয়। নানাজি দেশমুখ সর্বোত্তম পঞ্চায়েত সতত বিকাশ ব্লকস্তরে শ্রেষ্ঠ হিসাবে অমরপুর পঞ্চায়েত সমিতি, পদ্মবিল ব্লক উপদেষ্টা কমিটি এবং ডুকলি পঞ্চায়েত সমিতিকে পুরস্কৃত করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ জেলা, ব্লক, পঞ্চায়েত সমিতি, পঞ্চায়েত এবং ভিলেজ কমিটির প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা রিমোটের বোতাম টিপে ভার্চুয়ালি স্টেট পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টার ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন এবং ৪৭৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে কম্পিউটার সেট বিতরণ কর্মসূচির সূচনা করেন। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ৮টি জেলার জিলা পরিষদের সভাধিপতিগণ এবং গ্রামোন্নয়ন (পঞ্চায়েত) দপ্তরের অধিকর্তা প্রসূন দে।