নিজস্ব প্রতিনিধি || ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী পুস্পবন্ত প্রাসাদে তাজ হোটেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘আমরা বাঙালি’ দল। এক প্রেস বিবৃতিতে দলটি জানিয়েছে, রাজ্য সরকার এবং তিপ্রা মথা দলের মদতে রাজপরিবারের অতিথিশালাকে ভেঙে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের চুক্তি করা হয়েছে, যা রাজ্যের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের উপর সরাসরি আঘাত।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি তিপ্রা মথাকে খুশি করতে এডিসিকে ২৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ২০০ জন তিপ্রাসাকে তাজ হোটেলে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এই চুক্তির ভিত্তিতেই মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য মিউজিয়াম এন্ড কালচারাল সেন্টারকে টাটা গ্রুপের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
‘আমরা বাঙালি’ দলের অভিযোগ, রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত পুস্পবন্ত প্রাসাদকে হোটেলে পরিণত করা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দলটির মতে, তাজ হোটেলের জন্য শহরের অন্য কোনো স্থান নির্বাচন করা উচিত ছিল, কারণ এই প্রাসাদ শুধু রাজপরিবারের ইতিহাসের অংশ নয়, এটি বাঙালি ও জনজাতি সংস্কৃতির মিলনস্থলও।
প্রসঙ্গত, ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ত্রিপুরা সফরের সময় এই প্রাসাদে ছিলেন এবং এখান থেকেই ‘পুস্পবন্ত প্রাসাদ’ নামটি দিয়েছিলেন। পরে ১৯৪১ সালে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম জন্মদিন উদযাপন করেছিলেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এটি রাজভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং ২০২২ সালে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এটিকে ‘মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য মিউজিয়াম এন্ড কালচারাল সেন্টার’ হিসেবে উদ্বোধন করেন।
দলটির দাবি, তাজ হোটেল নির্মাণের মাধ্যমে রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। তারা সরকারকে বিকল্প জায়গা খুঁজে হোটেল নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছে এবং রাজ্যবাসীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করেছে। একই সঙ্গে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ঐতিহ্য রক্ষার জন্য রাজ্যজুড়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
‘আমরা বাঙালি’ দল স্পষ্ট জানিয়েছে, রাজ্যের উন্নয়ন তারা সবসময় সমর্থন করবে, তবে তা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংসের বিনিময়ে নয়।