স্বচ্ছ নিয়োগ নীতিতে বিভিন্ন দপ্তরে ১৯,২৬২ জনকে সরকারি চাকরি: মুখ্যমন্ত্রী
আগরতলা || স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ নীতি প্রণয়ন করে রাজ্যে সরকারি চাকরি প্রদান করা হচ্ছে। আজ যারা সরকারি চাকরিতে যোগদান করছেন, তারা সকলে তাদের মেধা এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলেই চাকরি পেয়েছেন। কেউ বলতে পারবে না চাকরি প্রাপকরা কোনও প্রভাবশালী বা ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য এই চাকরি পেয়েছেন। আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে টি.পি.এস.সি.’র মাধ্যমে ফুড ইনস্পেক্টর পদে নির্বাচিত চাকরি প্রাপকদের মধ্যে নিয়োগপত্র প্রদান অনুষ্ঠান এবং মেগা রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা, খাদ্যমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী সহ উপস্থিত অতিথিগণ ফুড ইনস্পেক্টর পদে নির্বাচিত ১৫ জন চাকরি প্রাপকের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। অনুষ্ঠান পরিসরে খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক, পরিবহণ এবং পর্যটন দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে মেগা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী রক্তদান শিবিরটি পরিদর্শন করে রক্তদাতাদের উৎসাহিত করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটিতে গুণগত ও দক্ষতার উপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছে। স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া জারি রেখে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আজকে (২১ মে) পর্যন্ত ডাই-ইন-হারনেস সহ মোট ১৯ হাজার ২৬২ জনকে বিভিন্ন দপ্তরে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে নতুন পদ সৃষ্টি সহ শূন্য পদগুলি পূরণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বনির্ভরতার জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গত এক বছরে ৩৭ জন এল.ডি.সি. এবং ১৯ জন মাল্টি টাস্কিং কর্মী জে.আর.বি.টি.’র মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে খাদ্য দপ্তরে যোগদান করেছেন। এছাড়াও খাদ্য দপ্তরে আরও ১২ জন সাব ইনস্পেক্টর, ৩ জন ফিউমিগেশন অ্যাসিস্টেন্ট, ৬ জন স্টোরকিপার এবং ৩৫ জন স্টোর গার্ড পদে নিয়োগ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের গণবন্টন ব্যবস্থাকে সর্বদা সচল রাখতে খাদ্য দপ্তরের সকলস্তরের কর্মচারীগণ নিরলস প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন। রাজ্যের জনগণের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গণবণ্টন ব্যবস্থায় ৬.০৬ লক্ষ প্রায়োরিটি হাউস হোল্ড এবং অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা পরিবারের জন্য ধারাবাহিকভাবে বিনামূল্যে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। ৩.৮৩ লক্ষ এ.পি.এল. ভুক্ত পরিবারকে ভর্তুকিতে চাল দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও প্রায় ৯ লক্ষ ৮১ হাজার রেশনকার্ড হোল্ডারদের ভর্তুকি মূল্যে আটা সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে এখন পর্যন্ত রাজ্যের কৃষকদের কাছ থেকে ২ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিকটন ধান কেনা হয়েছে। এরফলে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হিসাবে প্রায় ৪৪৬ কোটি টাকা কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনায় ২০১৮ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে সারা রাজ্যে মোট ৩,৬৪,৮৪৭টি এল.পি.জি. সংযোগ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের গণবন্টন ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, শক্তিশালী এবং আরও কার্যকরী করার জন্য দপ্তরের পক্ষ থেকে রেশনশপগুলিতে আধুনিক ই-পস মেশিন দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রক্তদান প্রসঙ্গে বলেন, রক্তের কোনও বিকল্প নেই। রক্তের কোনও ধর্ম হয় না। রক্তদানের মাধ্যমেই আমরা সবাই যে এক ও অভিন্ন এই ছবি প্রকাশ পায়। তিনি বলেন, কোভিডের সময় স্বেচ্ছা রক্তদানের ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা দিলে তা পূরণ করার জন্য রাজ্যের জনগণের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছিলো। সেই ঘাটতি মোকাবিলায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছেন। রক্ত নির্দিষ্ট সময়ের পর নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রক্তের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালন পর্ষদ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে।
অনুষ্ঠানে খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, রক্তদানের মাধ্যমে মানব ধর্ম পালনের সুযোগ হয়। আর্তের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও রক্তের বিকল্প এখনও আবিষ্কার হয়নি। তাই রক্তদান আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা। তিনি বলেন, আজ তিনটি দপ্তর একযোগে প্রশাসনিক কাজকর্মের বাইরে গিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা স্বীকার করে রক্তদান শিবিরের মাধ্যমে মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছে, যা সরকারি অন্যান্য দপ্তরগুলিকেও উদ্বুদ্ধ করবে। তিনি বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে স্বচ্ছতা। প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছ নিয়োগনীতির মাধ্যমে সরকারি চাকরি প্রদান করা হচ্ছে। রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে যোগ্য ব্যক্তিদের চাকরি প্রদান করা হচ্ছে। নতুন ১৫ জন ফুড ইনস্পেক্টর নিযুক্তির ফলে দপ্তরের কাজ আরও ত্বরান্বিত হবে বলে খাদ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে আগরতলা পুরনিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবহণ দপ্তরের সচিব সি. কে. জমাতিয়া। এছাড়াও পর্যটন দপ্তরের সচিব ইউ. কে. চাকমা, খাদ্য দপ্তরের বিশেষ সচিব দেবপ্রিয় বর্ধন, পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা প্রশান্ত বাদল নেগি, খাদ্য দপ্তরের অধিকর্তা সুমিত লোধ এবং পরিবহণ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব সুব্রত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।