নিউজ ডেস্ক || বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে। এই অনুপস্থিতিতে বিচারকৃত রায় দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক ঝড় তুলেছে, যখন হাসিনা ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন।
ঘটনার পটভূমি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলন, যা চাকরির কোটা ব্যবস্থা নিয়ে শুরু হয়ে হাসিনার পতনের দিকে পরিচালিত হয়। জাতিসংঘের মতে, আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১,৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত হন, যার মধ্যে অসংখ্য ছাত্র ছিলেন। আইসিটির তিন বিচারপতির প্যানেল হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে বলেন, তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের দমন করতে। এছাড়া, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও একই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যখন প্রাক্তন পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড শাস্তি হয়েছে।
হাসিনা তাঁর বিবৃতিতে রায়টিকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, “এটি একটি একপেশে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত, যা অগণতান্ত্রিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্বারা পরিচালিত। আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) স্বচ্ছ বিচার চাই।” তাঁর পক্ষের একজন নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক রায়কে “কাঙ্গারু আদালতের” বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, আন্দোলনকারীদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, “এমনকি হাজার মৃত্যুদণ্ডও যথেষ্ট নয় এই অমানবিকতার জন্য।”
এই রায়ের প্রভাব ব্যাপক। ঢাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে পুলিশ “শুট-অ্যাট-সাইট” নির্দেশ দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের কাছে হাসিনার প্রত্যর্পণ দাবি করেছে, কিন্তু ভারত এখনও সাড়া দেয়নি। আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা ২০২৬ সালের নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিচারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এই ঘটনা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পথে নতুন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছে। হাসিনা যদি আপিল করেন, তবে তাঁকে দেশে ফিরতে হবে বা গ্রেপ্তার হতে হবে। এটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক সম্পর্কের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে।


