নিজস্ব প্রতিনিধি || সিপাহীজলা জেলার সরকারি নেশা মুক্তি কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের জন্য সরবরাহকৃত রড, সিমেন্ট ও পাথর চুরির ঘটনায় জড়িত দুই ভাই পঙ্কজ দাস ও তাপস দাসকে তিন মাস পর অবশেষে আটক করেছে বিশ্রামগঞ্জ থানার পুলিশ। গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্রামগঞ্জ থানার ওসি সুবিমল দেবনাথের নেতৃত্বে পুলিশ সোমবার দুপুরে বিশ্রামগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাদের আটক করে।
জানা গেছে, মেলাঘর পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা পঙ্কজ দাস ও তার কাকাতো ভাই তাপস দাস পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বহিরাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই মোতাবেক তারা সোমবার রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়, কিন্তু পুলিশের জালে ধরা পড়ে।
ঘটনার সূত্রপাত তিন মাস আগে, যখন সিপাহীজলা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অফিস কমপ্লেক্সের পেছনে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি নেশা মুক্তি কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের ঠিকাদার স্বপন চন্দ্র দে পঙ্কজ দাসকে কাজের তদারকির জন্য সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু পঙ্কজ, তার ভাই তাপসের সঙ্গে মিলে শ্যাম স্টিল কোম্পানির ১০ টন রড, ২৫০ বস্তা স্টার সিমেন্ট এবং ৬০০ ফুট পাথর চুরি করে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যান। এই চুরির মাল দিয়ে তারা বাড়িতে বিলাসবহুল বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন।
ঠিকাদারের সন্দেহ হওয়ায় তিনি বিশ্রামগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর: PS case no 2025BRG007, তারিখ ০১/০৪/২০২৫, ধারা ৩১৬(৩), ১৩(৫) এবং ৩১৬(৫) BNS)। মামলার পর পুলিশ পঙ্কজ ও তাপসের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৮,৮০০ কেজি রড ও ৪০০ ফুট পাথর উদ্ধার করে, কিন্তু সিমেন্ট উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। মামলার পর থেকে দুই ভাই পলাতক ছিলেন। তারা অতিরিক্ত সেশন আদালত ও উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন, কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই তাদের আবেদন খারিজ হয়।
অবশেষে, গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের আটক করে। ওসি সুবিমল দেবনাথ জানিয়েছেন, চুরির সঙ্গে আর কারা জড়িত এবং চুরি যাওয়া মাল কোথায় বিক্রি হয়েছে, তা জানতে পঙ্কজ ও তাপসকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশালগড় মহকুমা আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন ঠিকাদার স্বপন চন্দ্র দে। ওসি দেবনাথ বলেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে যে আইনের হাত থেকে কেউ চিরকাল পালিয়ে থাকতে পারে না।” তিন মাস পলাতক থাকার পর পঙ্কজ ও তাপসের গ্রেপ্তার এই বার্তাই পুনরায় স্পষ্ট করেছে।