নির্বাচন কমিশনে নতুন সিদ্ধান্ত: সমস্ত ভোটকেন্দ্রে ওয়েবকাস্টিং, বিহার বিধানসভা নির্বাচন থেকে শুরু
নিউজ ডেস্ক || ভারতের নির্বাচন কমিশন ভোটদান প্রক্রিয়ার উপর নজরদারি আরও জোরদার করতে সমস্ত ভোটকেন্দ্রে ওয়েবকাস্টিং বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে। তবে, এই ওয়েবকাস্টিং শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫০% ভোটকেন্দ্রে ওয়েবকাস্টিং করা হতো। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, ইন্টারনেট সংযোগ থাকা এলাকাগুলিতে ওয়েবকাস্টিং করা হবে। যেসব এলাকায় ইন্টারনেট নেই, সেখানে ভিডিওগ্রাফি বা ফটোগ্রাফির মতো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া, রাজ্য, জেলা এবং বিধানসভা আসন স্তরে ওয়েবকাস্টিং মনিটরিংয়ের জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে, যেখানে তদারকির জন্য নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হবে।
এদিকে, গত ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪-এ কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে ১৯৬১ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার ৯৩(২)(এ) বিধি সংশোধন করেছে। এই সংশোধনীতে ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি, ওয়েবকাস্টিং ফুটেজ এবং প্রার্থীদের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের মতো ইলেকট্রনিক নথি জনসমক্ষে প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পূর্বে বিধি ৯৩-এ বলা ছিল, “নির্বাচন সম্পর্কিত সমস্ত নথি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।” নতুন বিধিতে বলা হয়েছে, এই নথি শুধুমাত্র “নিয়ম অনুসারে” জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ হবে।
এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে সিসিটিভি ফুটেজ দিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে, যার কারণে ইলেকট্রনিক রেকর্ডের প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে, নতুন নিয়মে প্রার্থীরা এই রেকর্ড পেতে পারবেন, এবং অন্যরা আদালতের মাধ্যমে এটি পেতে পারেন।
ইতিপূর্বে, পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্ট হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচন সংক্রান্ত এক মামলায় সিসিটিভি ফুটেজসহ নথি আবেদনকারীর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তবে, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল যে ইলেকট্রনিক রেকর্ডগুলি বিধি ৯৩(২)-এর আওতায় পড়ে না। এই অস্পষ্টতা দূর করতেই নিয়মটি সংশোধন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন আরও জানিয়েছে, মনোনয়ন ফর্ম, নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ, ফলাফল এবং নির্বাচনী হিসেব বিবরণীর মতো নথি বিধিতে উল্লেখিত এবং জনসমক্ষে প্রকাশযোগ্য। তবে, সিসিটিভি, ওয়েবকাস্টিং ফুটেজ বা প্রার্থীদের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের মতো ইলেকট্রনিক নথি নির্বাচন পরিচালনা বিধির আওতায় পড়ে না, বরং এগুলো স্বচ্ছতার জন্য রেকর্ড করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের মতে, অনেক ক্ষেত্রে নিয়মের উল্লেখ করে ইলেকট্রনিক রেকর্ড চাওয়া হয়েছে। সংশোধনীর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে শুধুমাত্র বিধিতে উল্লেখিত নথিগুলিই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। এই পদক্ষেপ নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।