নিউজ ডেস্ক || ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহলে তিপ্রা মথার ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং জনজাতি অঞ্চলে তাদের সক্রিয়তা নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহার সাম্প্রতিক মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বুধবার টাকারজলায় আয়োজিত বিজেপির দলীয় যোগদান সভায় তিনি স্পষ্ট সতর্কতা জারি করেছেন: “ভয়ের রাজনীতিতে কাজ হবে না। আঘাত আসলে এই ক্ষেত্রে নেওয়া হবে পদক্ষেপ।”
জনজাতিদের উন্নয়নের প্রতি বদ্ধপরিকর বিজেপি সরকারের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বানও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “জনজাতিদের উন্নয়নের জন্য আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করব না। বিজেপির উপর আস্থা রাখুন, কারণ আমরা আপনাদের পাশে আছি।” এই সভায় ২০০ পরিবারের ৬৯০ জন ভোটারকে বিজেপিতে স্বাগত জানিয়ে তিনি জনজাতি ভোটব্যাঙ্ককে একত্রিত করার চেষ্টা করেছেন।
তিপ্রা মথার সাম্প্রতিক অবস্থান এবং ২৩ অক্টোবরের আহূত রাজ্যব্যাপী বন্ধের ঘোষণার পটভূমিতে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য বিশ্লেষকরা ‘পজিশনিং স্টেটমেন্ট’ হিসেবে দেখছেন। রাজ্য রাজনীতিতে এখন তিন শক্তির ভারসাম্যের খেলা—বিজেপি, সিপিএম-কংগ্রেস জোট এবং তিপ্রা মথা। বিশেষত এডিসি (ট্রাইবাল এরিয়াজ অটোনোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল) এলাকায় মথার সাংগঠনিক ভিত্তি দৃঢ় হয়েছে, যা বিজেপির জনজাতি ভোটব্যাঙ্ককে চ্যালেঞ্জ করছে। আসন্ন এডিসি নির্বাচনের আগে বিজেপি এই প্রভাব মোকাবিলায় নতুন করে অংক কষছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুধু উন্নয়নমূলক আশ্বাস নয়, বরং জনজাতি ভোটারদের উদ্দেশ্যে সরকারের পাশে থাকার রাজনৈতিক বার্তা। একদিকে এতে মথাকে চ্যালেঞ্জ ছোড়া হয়েছে, অন্যদিকে বিজেপির জনজাতি নেতৃত্বকে একত্রিত রাখার কৌশলও লুকিয়ে আছে। “এটি বিজেপির জনজাতি রাজনীতিতে অবস্থান মজবুত করার প্রয়াস,” বলছেন একজন নামপ্রকাশ না করতে চাইলেন বিশ্লেষক।
তিপ্রা মথার বন্ধ ডাকের পেছনে অবৈধ অভিবাসন বন্ধ এবং জনজাতি অধিকার রক্ষার দাবি রয়েছে। এর জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “এমন স্টান্টস উন্নয়নের লহরকে থামাতে পারবে না। এটি শুধু মিডিয়া অ্যাটেনশনের জন্য।” রাজ্যের ৬৮ শতাংশ এলাকা এডিসি-র অধীনে থাকায় এই দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হতে পারে। বিজেপি এখন জনজাতি সমাজপতিদের মাসিক ভাতা ২,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫,০০০ টাকা করার মতো পদক্ষেপ নিয়ে ভোটারদের আকর্ষণ করছে।
ত্রিপুরার রাজনীতি এখন তৃতীয় শক্তির উত্থানে নতুন মোড় নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা স্পষ্টতই তিপ্রা মথাকে লক্ষ্য করে ছোড়া, যাতে বিজেপি জনজাতি রাজনীতির মাটিতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে।


