নিউজ ডেস্ক || ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সংবিধানের ১৪৩ নং অনুচ্ছেদের অধীনে শীর্ষ আদালতকে চিঠি লিখে ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। এই প্রশ্নগুলি রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির বিল অনুমোদনের ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের বৈধতা নিয়ে। এই ঘটনা বিচারবিভাগ ও কার্যনির্বাহী বিভাগের মধ্যে এক বিরল সংঘাতের সূচনা করেছে, যা ভারতের সাংবিধানিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।
সাম্প্রতিক কালে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে রাজ্যপালদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ুর মতো অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ এবং কেন্দ্রীয় শাসক দলের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টের একটি দ্বি-বিচারপতি বেঞ্চ রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির বিল অনুমোদনে সময়সীমা নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিল। এই নির্দেশের বিরুদ্ধেই রাষ্ট্রপতি মুর্মু সংবিধানের ১৪৩ নং অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম কোর্টের কাছে স্পষ্টীকরণ চেয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছেন, সংবিধানের ২০০ নং অনুচ্ছেদে রাজ্যপালের ক্ষমতা প্রয়োগের কোনও সময়সীমা উল্লেখ না থাকলে বিচারবিভাগ কীভাবে সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে? এছাড়াও, ১৪২ নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালকে দেওয়া সাংবিধানিক ক্ষমতা কি আদালতের মাধ্যমে পরিবর্তন করা সম্ভব? রাজ্যপাল কোনও বিল রাষ্ট্রপতির জন্য সংরক্ষণ করলে, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে কি সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিতে হবে? এমনকী, ২০০ ও ২০১ নং অনুচ্ছেদের আওতায় রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগে তা কি আদালতে বিচারযোগ্য? একটি বিল আইনে পরিণত হওয়ার আগে তার বিষয়বস্তু নিয়ে আদালত কি বৈচারিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
এই ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ক্ষেত্রে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রপতির এই পদক্ষেপ কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক এবং সাংবিধানিক ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট এই প্রশ্নের উত্তরে কী স্পষ্টীকরণ দেয়, তা আগামী দিনে দেশের শাসনব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব ফেলবে।