খোয়াইয়ে বিজেপির যোগদান সভায় মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা: শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে সশস্ত্র হামলার নিন্দা
নিউজ ডেস্ক || খোয়াই জেলার মুঙ্গিয়াকামি এলাকায় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কৃষ্ণপুর মন্ডলের উদ্যোগে আয়োজিত এক যোগদান সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে সশস্ত্র কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরার উন্নয়নের জন্য বিজেপি সরকার কোনো সমঝোতা করবে না এবং জনজাতি সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, পরিমল দেববর্মা ও সঞ্জীব দেববর্মার নেতৃত্বে প্রায় ৬,৪০০ জন ভোটার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি নতুন সদস্যদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আপনারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিজেপি ছাড়া রাজ্য বা দেশ সঠিক পথে এগোতে পারবে না।” তিনি সম্প্রতি টাকারজলায় একটি যোগদান সভায় হামলার ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, “সিভিল সোসাইটির নামে কিছু মুখোশধারী ব্যক্তি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে দা, লাঠি ও রড দিয়ে আমাদের কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে। এটি কোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নয়। তাদের আসল রূপ এখন সবার সামনে স্পষ্ট।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মুঙ্গিয়াকামিতে এই সভার আগে কিছু দুর্বৃত্ত ঘরে ঘরে গিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে, বলেছে বিজেপিকে এডিসি এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “বিজেপি দেশের যেকোনো জায়গায় যেতে পারে, কেউ তাদের আটকাতে পারবে না। এধরণের চালাকি বেশিদিন চলবে না।”
মুখ্যমন্ত্রী জনজাতি সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য বিজেপির প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে বলেন, “গত এডিসি নির্বাচনের সময় আমি বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে বিজেপির কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছিল, এমনকি মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্যের ছবিও মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেই ছবি যথাস্থানে ফিরিয়ে দিয়েছি।” তিনি অভিযোগ করেন, বিরোধীরা মহারাজাদের সম্মান দেয়নি, কিন্তু বিজেপি সরকার মহারাজা বীর বিক্রমের নামে এয়ারপোর্টের নামকরণ, মূর্তি স্থাপন এবং তাঁর জন্মদিনকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে সম্মান জানিয়েছে।
তিনি জানান, জনজাতি অধ্যুষিত ১২টি ব্লককে অ্যাসপিরেশন্যাল ব্লক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে জনজাতিদের সম্মান ও কল্যাণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জনজাতি উপগোষ্ঠীর সমাজপতিদের ৫,০০০ টাকা সাম্মানিক প্রদান এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ১,৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পের মাধ্যমে জনজাতি এলাকার উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও, এনএলএফটি ও এটিটিএফের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির ফলে অস্ত্র সমর্পণ এবং ৮৪টি বনধন বিকাশ কেন্দ্র স্থাপনের কথা জানান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজেপির প্রদেশ সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক বিপিন দেববর্মা, প্রাক্তন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, জেলা সভাপতি বিনয় দেববর্মা, এডিসি সদস্য বিদ্যুৎ দেববর্মা সহ দলের অন্যান্য নেতা ও কর্মীরা।
মুখ্যমন্ত্রী শেষে বলেন, “জনজাতি সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শান্তি ও উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য, এবং এতে কোনো সমঝোতা হবে না।”


