নিউজ ডেস্ক || ত্রিপুরাকে আজ, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা দ্বারা সম্পূর্ণ স্বাক্ষর রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ত্রিপুরা মিজোরাম ও গোয়ার পর দেশের তৃতীয় রাজ্য হিসেবে এই মর্যাদা লাভ করলো। এর আগে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে লাদাখ এই সাফল্য অর্জন করেছে। আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের রাজ্য সাক্ষরতা মিশন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাক্ষরতা হলো নতুন জীবনের দরজা খোলার চাবিকাঠি।
এই অর্জন “উল্লাস-নব ভারত সাক্ষরতা কর্মসূচির” সফল বাস্তবায়নের ফল। মুখ্যমন্ত্রী ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নিরক্ষর নাগরিকদের স্বাক্ষর করতে নিরলসভাবে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান এবং তাদের “সাক্ষরতার সৈনিক” হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রককেও তাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ত্রিপুরার সাক্ষরতার অগ্রগতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
* ১৯৬১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ত্রিপুরায় সাক্ষরতার হার ছিল ২০.২৪ শতাংশ।
* ১৯৯১ সালে এটি ৬০.৪৪ শতাংশে উন্নীত হয়।
* ২০০১ সালে তা ৭৩.১৯ শতাংশ এবং ২০১১ সালে ৮৭.২২ শতাংশে পৌঁছায়।
* ২০২২ সালের পয়লা আগস্টে চালু হওয়া উল্লাস-নব ভারত সাক্ষরতা কর্মসূচির কার্যকর প্রচেষ্টার ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে অনুযায়ী সাক্ষরতার হার দাঁড়ায় ৯৩.৭ শতাংশ।
* ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই হার বেড়ে ৯৫.৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
রাজ্যে তিনবার ফাউন্ডেশন লিটারেসি অ্যান্ড নিউমারেসি অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট (এফ.এল.এন.এ.টি.) নেওয়া হয়েছে:
* ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ প্রথম এফ.এল.এন.এ.টি. পরীক্ষায় ৪,৫৯৭ জনের মধ্যে ৩,৫৮১ জন উত্তীর্ণ হয়েছে।
* ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ১৪,১৭৯ জন পরীক্ষায় অংশ নেন, যাদের মধ্যে ১৩,৯০৯ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।
* ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ এফ.এল.এন.এ.টি. পরীক্ষায় ৫,৮৯৬ জনের মধ্যে ৫,৮১৯ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই অভিযানটি একটি সাধারণ প্রকল্প নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। উল্লাস কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যে ৯৪৩টি সামাজিক চেতনা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে প্রতিটি ব্লক ও গ্রামে। এখানে ২,২২৮ জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন, যাদের মধ্যে বড় অংশ ছাত্রছাত্রী, কলেজ শিক্ষার্থী ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিকশিত ভারত গড়ার ক্ষেত্রে সাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই দিল্লিতে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০-এর তৃতীয় বার্ষিকী অনুষ্ঠানে উল্লাস-১ লোগো, জন জন সাক্ষর স্লোগান এবং মোবাইল অ্যাপের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী এদিন উল্লাস কর্মসূচির মূল ৫টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের (প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা) অধিকর্তা প্রীতি মিনা বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মধ্যশিক্ষা ও বুনিয়াদি শিক্ষা ও সমগ্র শিক্ষার রাজ্য প্রকল্প অধিকর্তা এন. সি. শর্মা। এস.সি.ই.আর.টি.-এর অধিকর্তা লালনুন্নেমি ডার্লংও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উল্লাস নব-সাক্ষর কর্মসূচির উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ ‘উল্লাস’ নামক একটি পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন। নব-সাক্ষররা নাটক ও নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার নব সাক্ষরদের মধ্যে ‘বেস্ট লার্নার্স’-দের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। প্রদর্শিত স্টলগুলির মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদের এবং সাক্ষরতায় শ্রেষ্ঠত্বের নিরিখে সেরা জেলা হিসেবে উত্তর জেলাকে পুরস্কৃত করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ পুরস্কার প্রাপকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।