“স্রষ্টাদের সংযোগ, দেশের সংযোগ” -প্রধানমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক || প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ মুম্বইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড সেন্টারে ভারতের প্রথম বিশ্ব অডিও ভিজ্যুয়াল এবং এন্টারটেইনমেন্ট সামিট (WAVES 2025) উদ্বোধন করেন। এই ঐতিহাসিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি মহারাষ্ট্র দিবস এবং গুজরাট প্রতিষ্ঠা দিবসের শুভেচ্ছা জানান। বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশের শিল্পী, উদ্ভাবক, বিনিয়োগকারী এবং নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “WAVES শুধু একটি সংক্ষিপ্ত রূপ নয়, এটি সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা এবং বিশ্বজনীন সংযোগের একটি ঢেউ।” এই সম্মেলন চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, গেমিং, অ্যানিমেশন এবং গল্প বলার বিশাল বিশ্বকে প্রদর্শন করে, শিল্পী ও স্রষ্টাদের জন্য একটি বিশ্ব মঞ্চ তৈরি করছে।
প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় সিনেমার সমৃদ্ধ ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, ১৯১৩ সালের ৩ মে দাদাসাহেব ফালকে পরিচালিত ভারতের প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ মুক্তি পায়। তিনি রাজ কাপুরের রাশিয়ায় জনপ্রিয়তা, সত্যজিৎ রায়ের কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বীকৃতি এবং ‘আরআরআর’-এর অস্কার জয়ের কথা তুলে ধরেন। গুরু দত্তের কাব্যিক সিনেমা, ঋত্বিক ঘটকের সামাজিক প্রতিফলন, এ.আর. রহমানের সঙ্গীতের জাদু এবং এস.এস. রাজামৌলির মহাকাব্যিক গল্প বলার প্রশংসা করে তিনি বলেন, এই শিল্পীরা ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় করেছেন।
মোদী মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে ১৫০টি দেশের গায়কদের একত্রিত করে ‘বৈষ্ণব জন তো’ গানের বিশ্ব সংগীতায়নের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, WAVES এই ধরনের বিশ্ব সহযোগিতার একটি মঞ্চ, যা সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে মানুষকে একত্রিত করে। সম্মেলনের ‘ক্রিয়েটরস চ্যালেঞ্জ’ এবং ‘ক্রিয়েটোস্ফিয়ার’ উদ্যোগে ৬০টি দেশের প্রায় ১ লক্ষ সৃজনশীল পেশাদার অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে ৩২টি চ্যালেঞ্জ থেকে ৮০০ জন ফাইনালিস্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ভারত প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত সৃজনশীল উদ্ভাবনের প্রশংসা করেন এবং WAVES বাজারের মাধ্যমে নতুন স্রষ্টাদের বাজারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। এই বাজারে ৬,১০০ ক্রেতা, ৫,২০০ বিক্রেতা এবং ২,১০০ প্রকল্প রয়েছে, যা সৃজনশীল অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।
মোদী ভারতের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, ভারতের প্রতিটি গ্রামে লোককথা ও গল্পের অনন্য ঐতিহ্য রয়েছে। তিনি ভরত মুনির ‘নাট্যশাস্ত্র’ এবং কালিদাসের ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম’ এর কথা উল্লেখ করে বলেন, ভারতের গল্প বলার ঐতিহ্য হাজার বছরের পুরনো। তিনি ‘নাদ ব্রহ্ম’ ধারণার কথা উল্লেখ করে শিবের ডমরু, সরস্বতীর বীণা, কৃষ্ণের বাঁশি এবং বিষ্ণুর শঙ্খের মাধ্যমে ভারতীয় সঙ্গীতের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের গল্প শুধু সাংস্কৃতিক নয়, বরং বিজ্ঞান, খেলাধুলা, সাহস এবং উদ্ভাবনের সংমিশ্রণ। তিনি WAVES-কে ভারতের এই অসাধারণ গল্পগুলি বিশ্বের কাছে নতুন ফরম্যাটে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি ভারতের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রগতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ভারত শীঘ্রই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে এবং এর স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ।
মোদী বলেন, “এটি ভারতে অরেঞ্জ ইকোনমির উদয়ের সময়—কনটেন্ট, সৃজনশীলতা এবং সংস্কৃতির তিনটি স্তম্ভ।” তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের ১০০টিরও বেশি দেশে জনপ্রিয়তা, ওটিটি শিল্পের দশগুণ বৃদ্ধি এবং অ্যানিমেশন বাজারের ৪৩০ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি তরুণ স্রষ্টাদের এই সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির প্রভাবে সৃজনশীল দায়িত্বের উপর জোর দিয়ে বলেন, শিল্প ও সঙ্গীত মানুষের সংবেদনশীলতা বজায় রাখে। তিনি WAVES-কে সাংস্কৃতিক অখণ্ডতা ও ইতিবাচক মূল্যবোধ প্রচারের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করার আহ্বান জানান। তিনি ভবিষ্যতে WAVES অ্যাওয়ার্ডস চালু করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এটি বিশ্বের শিল্প ও সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মান হবে।
অনুষ্ঠানে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল শ্রী সি.পি. রাধাকৃষ্ণন, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিস, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং ড. এল. মুরুগান সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
চার দিনের এই সম্মেলনে ৯০টিরও বেশি দেশের ১০,০০০ প্রতিনিধি, ১,০০০ স্রষ্টা, ৩০০টিরও বেশি কোম্পানি এবং ৩৫০টিরও বেশি স্টার্টআপ অংশ নিচ্ছে। ৪২টি প্লেনারি সেশন, ৩৯টি ব্রেকআউট সেশন এবং ৩২টি মাস্টারক্লাসের মাধ্যমে এটি ভারতের মিডিয়া ও বিনোদন শিল্পের সম্ভাবনা প্রকাশ করছে। ২০২৯ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে WAVES ভারতকে বিশ্বের মিডিয়া ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।