নিউজ ডেস্ক || মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রস্তাবিত “মানবিক করিডোর” তৈরির পরিকল্পনা থেকে হঠাৎ পিছু হটেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এই করিডোরকে “রক্তাক্ত করিডোর” হিসেবে আখ্যায়িত করে সরকার ও পররাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে কড়া সতর্কবার্তা জারি করেছেন। তিনি স্পষ্ট জানান, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপে যুক্ত হবে না, এবং কাউকে এমন সুযোগ দেওয়া হবে না। জাতীয় স্বার্থ সবার আগে।”
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, যিনি সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত, ঘোষণা করেন, “সরকার এখন পর্যন্ত রাখাইন করিডোর নিয়ে কোনো পক্ষের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না।” তিনি জানান, জাতিসংঘ শুধু জানতে চেয়েছিল বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত মানবিক সহায়তা পাঠানো সম্ভব কিনা, যার জবাবে সরকার বলেছে তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে।
এর আগে গত এপ্রিলে পররাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, জাতিসংঘের প্রস্তাবিত মানবিক করিডোরে সরকার শর্তসাপেক্ষে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। তবে তিনি শর্তগুলোর বিস্তারিত প্রকাশ করেননি। এই ঘোষণার পর বিরোধী দল বিএনপি ও কিছু বাম দল তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “এই সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক। জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।”
ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক মতামত নিবন্ধে বলা হয়, এই করিডোর প্রকল্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের প্রস্তাব হলেও এটি সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি এবং সামরিক বা গোয়েন্দা প্রভাব বিস্তারের মাধ্যম হতে পারে। একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই প্রস্তাব চীনের ল্যান্ড-টু-সি করিডোরকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূকৌশলগত কৌশলের অংশ।
প্রাক্তন কূটনীতিক মুনশি ফয়েজ আহমদ সতর্ক করে বলেন, “চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। এই করিডোরে আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে তা প্রত্যাখ্যান করা উচিত, অন্যথায় আমরা ফাঁদে পড়ে যাব।”
বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ১৩ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে, যাদের মধ্যে ২০২৪ সালে ১.১৮ লক্ষ কক্সবাজারে বসবাস শুরু করেছে। রাখাইনের গৃহযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক ভূমিকম্প পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। সামরিক বাহিনীর চাপ ও রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে অন্তর্বর্তী সরকার করিডোর থেকে সরে এসে স্পষ্ট করেছে যে, তারা এখনো নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পারেনি এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না।