নিউজ ডেস্ক || প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ উত্তর প্রদেশের কানপুরে প্রায় ৪৭,৬০০ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেছেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি জানান, গত ২৪ এপ্রিল পাহলগামে সন্ত্রাসী হামলার কারণে কানপুর সফর বাতিল করতে হয়েছিল। তিনি কানপুরের সন্তান শ্রী শুভম দ্বিবেদীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের তিনটি সুস্পষ্ট নীতি রয়েছে: প্রতিটি হামলার জবাব কঠোরভাবে দেওয়া হবে, পারমাণবিক হুমকিতে ভারত ভীত হবে না এবং সন্ত্রাসীদের মদতদাতা সরকার ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হবে না। তিনি ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করা হয় এবং পাক সেনাবাহিনী যুদ্ধ বন্ধের জন্য অনুরোধ করতে বাধ্য হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপারেশন সিন্দুর’ ভারতের স্বদেশী প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র শক্তি প্রদর্শন করেছে। ব্রহ্মোস মিসাইলের মতো স্বদেশী অস্ত্র নিখুঁতভাবে শত্রুপক্ষের ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। তিনি উত্তর প্রদেশের প্রতিরক্ষা উৎপাদনে অবদানের প্রশংসা করেন, বিশেষ করে কানপুরের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি ও প্রতিরক্ষা করিডরের কানপুর নোডের ভূমিকা। তিনি জানান, আমেঠিতে একে-২০৩ রাইফেলের উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং ব্রহ্মোস মিসাইলের উৎপাদনও উত্তর প্রদেশে হচ্ছে। এই উদ্যোগগুলি কানপুর ও উত্তর প্রদেশকে প্রতিরক্ষা রপ্তানিতে নেতৃত্ব দেবে এবং স্থানীয় যুবকদের জন্য হাজার হাজার চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে।
প্রধানমন্ত্রী কানপুরে ৬৬০ মেগাওয়াট পানকি পাওয়ার প্ল্যান্ট, ৬৬০ মেগাওয়াট নেয়বেলি পাওয়ার প্ল্যান্ট, ১৩২০ মেগাওয়াট জওহরপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট, ৬৬০ মেগাওয়াট ওবরা-সি পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ৬৬০ মেগাওয়াট খুরজা পাওয়ার প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেন। এছাড়াও, তিনি ইয়মুনা এক্সপ্রেসওয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ইয়েডা)-তে ২২০ কেভি সাবস্টেশন এবং গ্রেটার নয়ডায় ১৩২ কেভি সাবস্টেশনের শিলান্যাস করেন। এই প্রকল্পগুলি উত্তর প্রদেশের শক্তি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রধানমন্ত্রী কানপুর মেট্রোর চুন্নিগঞ্জ থেকে কানপুর সেন্ট্রাল পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করেন, যার মূল্য ২,১২০ কোটি টাকার বেশি। এই প্রকল্পে ১৪টি স্টেশন থাকবে, যার মধ্যে পাঁচটি নতুন আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলিকে সংযুক্ত করবে। তিনি বলেন, মেট্রোর এই সম্প্রসারণ কানপুরের ব্যবসায়ী, ছাত্র এবং সাধারণ মানুষের জন্য যাতায়াত সহজ করবে।
প্রধানমন্ত্রী কানপুর সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশনের আধুনিকীকরণের কথা উল্লেখ করেন, যা শীঘ্রই বিমানবন্দরের মতো সুবিধা প্রদান করবে। তিনি ফারুখাবাদ-অনওয়ারগঞ্জ রেল বিভাগে ১,০০০ কোটি টাকার এলিভেটেড রেল করিডরের ঘোষণা করেন, যা ট্রাফিক জটিলতা কমাবে এবং সময় বাঁচাবে। এছাড়াও, কানপুর-লখনউ এক্সপ্রেসওয়ে শীঘ্রই চালু হবে, যা লখনউ যাত্রার সময় ৪০-৪৫ মিনিটে কমিয়ে দেবে।
প্রধানমন্ত্রী এমএসএমই খাতের রূপান্তরের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে সংজ্ঞা সংশোধন করে ব্যবসার প্রসার সহজ করা হয়েছে। মুদ্রা যোজনা, ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম এবং ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্যারান্টির মাধ্যমে ছোট ও মাঝারি শিল্পকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। তিনি কানপুরের ঐতিহ্যবাহী চামড়া ও হোসিয়ারি শিল্পের উন্নয়নে ‘ওয়ান ডিস্ট্রিক্ট, ওয়ান প্রোডাক্ট’ উদ্যোগের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী পিএম আয়ুষ্মান বয় বন্দনা যোজনা, জাতীয় জীবিকা মিশন এবং পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলি যোজনার সুবিধাভোগীদের মধ্যে সার্টিফিকেট ও চেক বিতরণ করেন। তিনি বলেন, এই উদ্যোগগুলি মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।
এই অনুষ্ঠানে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথ, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য ও শ্রী ব্রজেশ পাঠক সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উত্তর প্রদেশকে একটি আধুনিক ও উন্নত রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কানপুরের এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলি রাজ্যের শিল্প, অবকাঠামো ও সংযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে, যা ভারতের আত্মনির্ভরতা ও প্রগতির প্রতীক।