নিউজ ডেস্ক || নতুন দিল্লিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাইজিং নর্থ-ইস্ট ইনভেস্টার্স সামিটে উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য মোট ৪৩ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সামিটে ত্রিপুরার জন্য ৬৪টি মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মাধ্যমে ১৫,১৮২.৩ কোটি টাকার বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত হয়েছে। শনিবার আগরতলার হোটেল পোলো টাওয়ারে আয়োজিত এনইআর-স্টেকহোল্ডারস কনসালটেশন প্রোগ্রামে এ কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে রাজ্য ও বহিরাজ্যের ব্যবসায়ী সংস্থার প্রতিনিধি, ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন দপ্তরের সচিব ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সামিটে জাপান, ইউরোপ, আশিয়ান সহ ৮০টির বেশি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন। এই সামিট উত্তর-পূর্ব ভারতকে অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথে একটি মাইলফলক হয়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরা ও কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এ পর্যন্ত ১৮৪টি মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মাধ্যমে ১৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশের বেশি ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। ত্রিপুরায় পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আগর, বাঁশ ও রাবার খাতে বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। শিল্প স্থাপনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে ভূমি, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করে ভর্তুকি ও করমুক্তির সুবিধা প্রদানের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য গঠিত উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স আগামী ৬ মাসের মধ্যে একটি কৌশলগত রোডম্যাপ তৈরি করবে। এছাড়া, রেল, সড়ক, বিমানবন্দর, জলপথ, বিদ্যুৎ ও টেলিকম পরিষেবার মতো মৌলিক পরিকাঠামোর উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
ত্রিপুরা সরকার শিল্প বিনিয়োগ নীতি, আইটি নীতি, আগর নীতি, পর্যটন নীতি, স্টার্টআপ নীতি ও ইলেকট্রিক ভেহিকল নীতি গ্রহণ করেছে। বিজনেস রিফর্মস অ্যাকশন প্ল্যান-২০২৪-এর আওতায় ৩৮৭টি সংস্কার সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগম ১,৫০০ একরের বেশি নতুন শিল্প অঞ্চল ও ক্ষেত্রভিত্তিক শিল্প পার্ক গড়ে তুলেছে। রাজ্যে ৮৬,১১৭টির বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ৬০,৩৯০টি স্ব-সহায়ক দল রয়েছে। এছাড়া, ১ লক্ষের বেশি লাখপতি দিদি রয়েছেন।
শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘অষ্টলক্ষ্মী’ দৃষ্টিভঙ্গির ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নৈকট্যের কারণে এই অঞ্চল বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিতে জানান, গত ৬ বছরে ত্রিপুরার জিএসডিপি দ্বিগুণ হয়েছে, যেখানে বিনিয়োগকারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন দপ্তরের অধিকর্তা ড. শৈলেশ কুমার যাদব।
ত্রিপুরার অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই নতুন অধ্যায় বিনিয়োগ ও উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্যকে সমৃদ্ধির নতুন শিখরে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।