নিউজ ডেস্ক || দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও ত্রিপুরার কৃষি খাতে এক নতুন জাগরণের সূচনা হয়েছে। গত ২৯ মে থেকে শুরু হওয়া ‘বিকশিত ভারত কৃষি সংকল্প অভিযান’ রাজ্যে কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও উদ্দীপনা ছড়িয়ে দিয়েছে। ১২ দিনের এই মেগা কৃষি সচেতনতা কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল সারা রাজ্যে ১ লক্ষ ৭২ হাজার কৃষককে যুক্ত করা। ইতিমধ্যে ৮ দিনে ১ লক্ষ ২০ হাজার কৃষক এই অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। বাকি ৪ দিনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে আরও বেশি কৃষকের কাছে পৌঁছানোর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ।
এই অভিযানের অংশ হিসেবে রাজ্য জুড়ে প্রতিদিন ৭২টি করে মোট ৮৬৪টি কৃষক সভার আয়োজন করা হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী নিজে প্রতিদিন একাধিক সভায় অংশ নিয়ে কৃষকদের উৎসাহিত করছেন। তিনি বলেন, “কৃষকই ভগবান, তিনিই অন্নদাতা। এই রথযাত্রা কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে এবং মাটির গন্ধে বিশ্বাস জাগাচ্ছে।” রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, বিধায়ক, পঞ্চায়েত ও পুর নিগমের জনপ্রতিনিধি এবং কৃষি, উদ্যান ও প্রাণীসম্পদ দপ্তরের কর্মীরা এই কর্মসূচির সাফল্যে নিরলস কাজ করে চলেছেন।
এই রথযাত্রা শুধু প্রচার নয়, প্রযুক্তিনির্ভর কৃষির বাস্তব প্রয়োগ। প্রতিটি রথে রয়েছে এলইডি স্ক্রিন, সাউন্ড সিস্টেম ও মিনি ডেমো প্লট, যার মাধ্যমে কৃষকদের দেখানো হচ্ছে ড্রোন স্প্রে, জৈব চাষ, সূর্যমুখী ও উচ্চ ফলনশীল ধান চাষের আধুনিক পদ্ধতি। মোবাইল সয়েল টেস্টিং ভ্যান কৃষকদের জমির গুণগতমান পরীক্ষা করে কোন ফসল লাভজনক হবে, তা জানাচ্ছে, যার ফলে উৎপাদন বাড়ছে এবং খরচ কমছে।
রাজ্যের ৮টি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (KVK) এখন কৃষকদের আশ্রয়স্থল। ফসল নির্বাচন, সার প্রয়োগ, কীটনাশক ব্যবহার ও ফসল সংরক্ষণে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় গঠিত বহুমাত্রিক টেকনিক্যাল টিম কৃষকদের সমস্যার দ্রুত সমাধান দিচ্ছে।
শুক্রবার সিপাহিজলা জেলার ফুলতলি গ্রামে আয়োজিত কৃষক সমাবেশে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন কমলাসাগরের বিধায়ক অন্তরা দেব সরকার। তিনি বলেন, “মন্ত্রী রতন লাল নাথের নেতৃত্বে ত্রিপুরার কৃষিব্যবস্থায় নতুন গতি ও দিশা এসেছে। পাহাড় থেকে সমতল, সর্বত্র বিজ্ঞানসম্মত কৃষির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।” কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে ত্রিপুরাকে এই অভিযানের সফল বাস্তবায়নে শীর্ষ রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, “আমরা কাগজে-কলমে নয়, মাঠে-মাটিতে ফলাফল চাই। এই রথযাত্রা ত্রিপুরার কৃষিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।” ৯ জুন পর্যন্ত চলা এই অভিযান নির্ধারিত সময়ের আগেই লক্ষ্য ছুঁয়ে নতুন নজির স্থাপন করবে বলে আশাবাদী কৃষি দপ্তর।


