নিউজ ডেস্ক || ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা, রাজ্যসভার সাংসদ এবং ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন আজ দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, এবং গত কয়েকদিনে তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল। তাঁর প্রয়াণে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আজ হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
শিবু সোরেনের পুত্র তথা ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এক্স-এ লিখেছেন, “আমাদের প্রিয় ‘দিশোম গুরুজি’ আর নেই। আজ আমি সবকিছু হারালাম।” তাঁর এই শোকবার্তা রাজ্যের জনগণের মধ্যে গভীর শোকের সঞ্চার করেছে।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় শিবু সোরেন আটবার লোকসভায় এবং দু’বার রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের এই নেতা তৎকালীন বিহারের রামগড় জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে বামপন্থী নেতা একে রায় ও কুরমি নেতা বিনোদ বিহারী মাহাতোর সঙ্গে মিলে তিনি ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা প্রতিষ্ঠা করেন। ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম মুখ। তাঁর নেতৃত্বে ২০০০ সালে ঝাড়খণ্ড একটি পৃথক রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৮০ সালে দমকা আসন থেকে প্রথমবার লোকসভায় নির্বাচিত হন তিনি। এই আসন পরবর্তীতে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়। তবে, ২০১৯ সালে তিনি এই আসনে বিজেপি প্রার্থী নলিন সোরেনের কাছে প্রায় ৪৫,০০০ ভোটে পরাজিত হন। ২০০৫ সালে তিনি প্রথমবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হন, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে মাত্র ৯ দিন পর পদত্যাগ করেন।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এক্স-এ শোকবার্তায় বলেন, “শিবু সোরেনজির প্রয়াণ সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক বড় ক্ষতি। তিনি আদিবাসী পরিচয় ও ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের দাবিতে দৃঢ়ভাবে সংগ্রাম করেছিলেন। তাঁর অবদান চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স-এ লিখেছেন, “শ্রী শিবু সোরেনজি ছিলেন এক মাটির মানুষের নেতা। আদিবাসী সম্প্রদায়, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর প্রয়াণে আমি ব্যথিত।” প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে গিয়ে শিবু সোরেনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান।
শিবু সোরেনের প্রয়াণে ঝাড়খণ্ড তথা দেশের রাজনীতিতে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর অবদান এবং নেতৃত্ব আদিবাসী সমাজ ও ঝাড়খণ্ডের মানুষের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।