ত্রিপুরায় অনুপ্রবেশ ইস্যুতে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক, তিপরা মথার বিধায়কের নেতৃত্বে আন্দোলন
নিউজ ডেস্ক || ত্রিপুরার সীমান্তে অব্যাহত অনুপ্রবেশ রুখতে কঠোর পদক্ষেপের দাবিতে আগামী ১৩ অক্টোবর রাজ্যজুড়ে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দিয়েছেন তিপরা মথার বিধায়ক ও প্রাক্তন জঙ্গি নেতা রঞ্জিত দেববর্মা। শনিবার বিধায়ক আবাসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা করেন, যা রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে।
রঞ্জিত দেববর্মা অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ সত্ত্বেও ত্রিপুরা সরকার অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করে ফেরত পাঠানোর জন্য কোনো কার্যকর প্রশাসনিক অভিযান শুরু করেনি। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের নির্দেশ ছিল সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। কিন্তু রাজ্য সরকার এখনো এই নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করেনি। ফলে প্রতিনিয়ত সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে শরণার্থীদের ভ্রমণ সংক্রান্ত নথির বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে ভারতে আগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে নাগরিকত্বের যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করলেও, নতুন নির্দেশিকায় ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারতে আগতদের অবৈধ নথি থাকলেও অপরাধী হিসেবে গণ্য না করার কথা বলা হয়েছে। রঞ্জিতের মতে, এই নির্দেশিকার কারণে অনুপ্রবেশ রোধে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি জানান, সম্প্রতি আমবাসা ও বিলোনিয়ায় অনুপ্রবেশকারীদের আটক করা হয়েছে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য সফরের আগে উদয়পুরে পাঁচজন বাংলাদেশি নাগরিককে পুলিশ আটক করেছে। এই ঘটনাগুলো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি শুধু জানিয়েছেন, পুলিশ ও বিএসএফ সর্বদা সজাগ রয়েছে। কিন্তু রঞ্জিতের দাবি, “পুলিশ ও বিএসএফের চোখে ধুলো দিয়ে সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত অনুপ্রবেশ চলছে।”
এই পরিস্থিতিতে তিপরা মথার এই বিধায়ক অরাজনৈতিক মঞ্চ ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ১৩ অক্টোবর রাজ্যজুড়ে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দিয়েছেন। এই বনধের মাধ্যমে তিনি গোটা রাজ্যকে স্তব্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘোষণা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, কারণ তিপরা মথা শাসক জোটের শরিক হলেও এই পদক্ষেপকে অনেকে অরাজনৈতিক আন্দোলনের আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন।
এই বনধের ডাক রাজ্যের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। ত্রিপুরার সীমান্ত নিরাপত্তা ও অনুপ্রবেশ ইস্যুতে এই আন্দোলন কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলবে।