নিজস্ব প্রতিনিধি || ত্রিপুরার চরিলাম এলাকায় এক চায়ের দোকান ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে। নেতাজি সংঘ ক্লাবের সদস্যরা পুলিশের সামনেই দোকানে ঝাঁপিয়ে পড়ে অবরোধ স্থাপন করলো, যাতে প্রশাসনকে বড় অসহায় অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার ‘জোর-জুলুম করে চাঁদা আদায় যাবে না’ ঘোষণা সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটেছে, যা রাজ্যবাসীদের মনে যুগান্তকারী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে—বাহুবলির সামনে আইনের শাসন কতটা দুর্বল!
ঘটনার সূত্রপাত বিশালগড়ের আগরতলা-সাবরুম জাতীয় সড়কের উপর চরিলাম পুরান বাড়ি সংলগ্ন এলাকায়। স্থানীয় মহিলা ব্যবসায়ী লিপি দাসের চায়ের দোকানে নেতাজি সংঘ ক্লাবের সদস্যরা ৫,০০০ টাকা চাঁদার দাবি জানায়। অস্বীকার করতেই তারা দোকান ভাঙচুর করে, এমনকি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এই হুমকির প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে উঠেছে।
গত রবিবার সকালে আক্রান্ত লিপি দাস বিশালগড় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠেছে জয়ন্ত দাস, জোটন সাহা এবং সামু রায়। থানা পুলিশ মামলা নিয়ে তদন্ত শুরু করে এবং অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু এর ফলে অভিযুক্তদের মা-বোন-স্বজনরা প্রতিবাদে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বসে পড়ে। খবর পেয়ে বিশালগড় থানার পুলিশসহ মহকুমা পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
কিন্তু সেখানে যা ঘটল, তা রাজ্যের আইনপালনের ক্ষমতা নিয়ে সবাইকে চিন্তায় ফেলেছে। উপস্থিত মহকুমা পুলিশ কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের তাণ্ডবের সামনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। ক্লাবের গুণ্ডা বাহিনী আক্রান্ত দোকানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখে। পুলিশের কোনো সুমুঠো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি; বরং তারা লেজ গুটিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়। সাধারণ জনগণের মতে, এতে পুলিশকে ক্লাবের দুর্বৃত্তদের কাছে অসহায় মনে হয়েছে।
আরও বিতর্কের বিষয় হলো, অভিযুক্তরা নিজেদের বাঁচাতে পরিকল্পিতভাবে অন্যের নামে মিথ্যে প্রতিবাদ করে এবং দোকান মালিকের বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ায়। এক মহিলা অভিযোগ করেন যে, দোকানে নেশাদ্রব্য বিক্রি হয় এবং জাতীয় সড়কের পাশে বিলাসবহুল গাড়ির লাইন পড়ে। কিন্তু জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—যদি এমন হয়, তাহলে ক্লাব সদস্যরা বা স্থানীয়রা কেন এতদিন প্রশাসনকে জানায়নি? এই জাতীয় সড়ক দিয়ে নিত্যদিন হাজার হাজার গাড়ি চলাফেরা করে, তবু চায়ের দোকানে দু’কাপ চা খাওয়া কি এত বড় অপরাধ?
ক্লাবের দাবি আরও স্পষ্ট—যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাদের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে ‘ছি ছি’ রব উঠেছে। সাধারণ জনতা প্রশ্ন তুলছে, রাজ্যে আইনের শাসন কতটা কার্যকর? আক্রান্ত চা ব্যবসায়ী লিপি দাস কি ন্যায়বিচার পাবেন? এই ঘটনা বাহুবলিদের সামনে আইনপ্রশাসনের দুর্বলতা প্রমাণ করে দিয়েছে, যা ‘জোর যার মুল্লুক তার’ প্রবাদকে বাস্তবায়িত করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার সাম্প্রতিক ঘোষণা এখন কি ‘কলাপাতা’ হয়ে গেল? রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো বক্তব্য আসেনি। তবে এই ঘটনা রাজ্যবাসীদের মনে গভীর গুঞ্জন তৈরি করেছে—আইনের আশ্রয়ে কতটা নিরাপদ সাধারণ মানুষ?