নিউজ ডেস্ক || ভারতের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচিত হলো। ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে ১৮ দিনের গবেষণামূলক সফর শেষে সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। অ্যাক্সিওম স্পেস-এর নেতৃত্বে পরিচালিত অ্যাক্সিওম-৪ মিশনের অংশ হিসেবে তিনি গত ২৫ জুন মহাকাশে যাত্রা করেন এবং ৬০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এই অভিযানের মাধ্যমে তিনি আইএসএস পরিদর্শনকারী প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
১৯৮৪ সালে স্কোয়াড্রন লিডার রাকেশ শর্মা সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যৌথ অভিযানে মহাকাশে যাওয়ার পর শুভাংশু শুক্লা দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন। তবে তিনি বাণিজ্যিক মহাকাশ অভিযানের মাধ্যমে আইএসএস-এ পৌঁছানো প্রথম ভারতীয়, যা সম্পূর্ণভাবে একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি মিশনের অংশ।
স্পেসএক্সের ড্রাগন মহাকাশযান ‘গ্রেস’ ১৪ জুলাই বিকেল ৪:৫০ মিনিটে আইএসএস থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং ১৫ জুলাই দুপুর ৩:০১ মিনিটে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরে সফলভাবে অবতরণ করে। অবতরণের পর উদ্ধারকারী দল মহাকাশচারীদের উদ্ধার করে এবং তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা সম্পন্ন করে। শুভাংশু শুক্লাকে হাসিমুখে মহাকাশযান থেকে বের হতে দেখা গেলেও, দীর্ঘদিন মহাশূন্যে থাকার কারণে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে পুনরায় অভ্যস্ত হতে তাঁকে সহায়তা নিতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স-এ এই সাফল্যের জন্য শুভাংশু শুক্লাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লার ঐতিহাসিক মহাকাশ মিশন ভারতের জন্য গর্বের মুহূর্ত। তাঁর সাহস ও নিষ্ঠা আমাদের গগনযান মিশনের পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
অ্যাক্স-৪ মিশনে শুভাংশু শুক্লার সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পেগি হুইটসন (মিশন কমান্ডার), পোল্যান্ডের স্লাভোস উজনানস্কি-উইসনিয়েভস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবার কাপু। এই মিশনে কৃষি, চিকিৎসা, মানব শারীরবিদ্যা ও পানি পরিশোধেন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করা হয়, যার নমুনা এখন পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হবে।
এই সাফল্য ভারতের গগনযান প্রকল্পের প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করেছে। ইসরো আগামী বছর নিজস্ব রকেট ও মহাকাশযানের মাধ্যমে ভারতীয় নভোচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। শুভাংশু শুক্লার এই অভিযান ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি কৌশলগত মাইলফলক, যা ভবিষ্যতের মহাকাশচারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
ভারত এখন মহাকাশ গবেষণার বিশ্বমঞ্চে নিজের স্থান আরও দৃঢ় করেছে, এবং এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত কোটি কোটি ভারতীয়র জন্য গর্ব ও সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।