আগরতলার দুর্গাবাড়ি পূজা: রাজকীয় ঐতিহ্যের অমলিন গৌরব

2 Min Read
নিউজ ডেস্ক || উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের সাদা গম্বুজ আর রাজকীয় স্থাপত্য যেন ত্রিপুরার ইতিহাসের গল্প বলে চলে। তারই পাশে অবস্থিত দুর্গাবাড়ি মন্দির, যেখানে ১৪৯ বছর ধরে চলছে রাজকীয় মর্যাদায় দুর্গাপূজা। সময়ের স্রোতে ত্রিপুরার রাজতন্ত্র মুছে গেলেও, দুর্গাবাড়ির এই পূজা আজও টিকে আছে অক্ষুণ্ণ গৌরবে।
প্রায় পাঁচশো বছর আগে ত্রিপুরার রাজপরিবার শুরু করেছিলেন এই পূজার প্রথা। ১৮৩৮ সালে মহারাজা কৃষ্ণ কিশোর মানিক্যের হাত ধরে আগরতলায় রাজধানী স্থাপিত হওয়ার পর এখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় দুর্গাবাড়ি পূজা। রাজপরিবারের আমলে এই পূজা ছিল শুধু ধর্মীয় আচার নয়, প্রজাদের সঙ্গে রাজাদের নিবিড় সম্পর্কের প্রতীক। ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরা ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একীভূত হলেও, এই ঐতিহ্য অটুট থেকেছে।
এ বছরও রাজ্য সরকার ৭.৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে এই পূজার জন্য, যা ভারতের মধ্যে একমাত্র উদাহরণ যেখানে সরকার সরাসরি দুর্গাপূজার খরচ বহন করে। পূজার সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান রাজপরিবারের অনুমোদন নিয়ে সম্পন্ন হয়। প্রথা অনুযায়ী, পূজার আগে ও পরে পশ্চিম ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, যিনি ‘সেবায়েত’ হিসেবে পরিচিত, রাজপরিবারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।
পাঁচ দিনের এই পূজায় হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয়। ত্রিপুরা ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকেও ভক্তরা ছুটে আসেন। পূজার সময় মহিষ, ছাগল, পায়রার বলিদান হয়, যার খরচও বহন করে সরকার। দশমীর দিন রাজকীয় শোভাযাত্রা, পুলিশ ব্যান্ডের জাতীয় সঙ্গীত এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিসর্জন এই উৎসবকে ঐতিহাসিক মহিমায় উজ্জ্বল করে।
ছয় প্রজন্ম ধরে ভট্টাচার্য পরিবার এই পূজার প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমান প্রধান পুরোহিত জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেন, “দুর্গাবাড়ি পূজা শুধু আচার নয়, এটি ত্রিপুরার আত্মার সঙ্গে জড়িত এক উত্তরাধিকার।”
উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ আজ জাদুঘর হলেও, দুর্গাবাড়ি মন্দিরই এই পূজার প্রাণকেন্দ্র। রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতন্ত্রে পৌঁছেও, আগরতলার দুর্গাবাড়ি পূজা আজও অমলিন—তার অনন্য গৌরবে।
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version