কৃষির নতুন দিগন্তে ত্রিপুরা, নারী কৃষকদের অংশগ্রহণে রচিত হল ইতিহাস

3 Min Read

ত্রিপুরায় কৃষি সংকল্প অভিযানের ঐতিহাসিক সাফল্য: .৯৫ লক্ষ কৃষকের কাছে পৌঁছাল রাজ্য

নিউজ ডেস্ক || ত্রিপুরা রাজ্যে ‘বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান’ এক নজিরবিহীন সাফল্যের ইতিহাস রচনা করেছে। এই অভিযানের মাধ্যমে রাজ্যজুড়ে ১,৯৫,২৬৩ জন কৃষকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে, যার মধ্যে ৬৬,৮৯৯ জন (প্রায় ৩৪ শতাংশ) ছিলেন নারী কৃষক। প্রাথমিক লক্ষ্য ১.৭২ লক্ষ কৃষকের তুলনায় এটি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী রতন লাল নাথ জানান, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে আসামের পর ত্রিপুরাই এই অভিযানে সর্বাধিক কৃষকের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্ন কৃষিকে আধুনিক ও স্থিতিশীল ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করে ভারতকে বিশ্বের শস্য ব্যাংকে পরিণত করা। এই অভিযান ত্রিপুরার কৃষি খাতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।”

২৯ মে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত চলা এই অভিযানে দেশজুড়ে ২,১৭০ জন কৃষি কর্মকর্তা ও প্রায় ১৬,০০০ কৃষি বিজ্ঞানী অংশ নিয়েছেন। অভিযানের লক্ষ্য ছিল ৭০০টি জেলায় ১.৫ কোটি কৃষকের কাছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়া, পাশাপাশি খাদ্য ও পুষ্টি সুরক্ষা, কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করা।

অভিযানটি ছয়টি মূল ক্ষেত্রে কাজ করেছে: কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ হ্রাস, ন্যায্য দাম নিশ্চিতকরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিপূরণ, ফসল বৈচিত্র্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে উৎসাহ এবং জৈব কৃষির প্রসার। ত্রিপুরার প্রতিটি জেলায় ৩টি করে বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়, যারা প্রতিদিন ৩টি করে কৃষক সভা করেছেন। ফলে রাজ্যের ৮টি জেলায় মোট ৯৫৬টি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতিটি সভায় গড়ে ২০০ জন কৃষক, এফপিও, এফপিসি ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য অংশ নিয়েছেন।

মন্ত্রী নাথ জানান, এই সভাগুলিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প, বৈজ্ঞানিক কৃষি, পশুপালন, মৎস্যচাষ, মৃত্তিকা স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “১৫ দিনের এই অভিযানে কৃষকদের মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে রাজ্যের কৃষি উন্নয়নের রোডম্যাপ তৈরিতে সহায়ক হবে।”

তিনি আরও বলেন, “দেশ সবুজ, সাদা ও নীল বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে। এখন হলুদ বিপ্লবের পথে এগোচ্ছে, এবং শীঘ্রই ‘মিষ্টি বিপ্লব’ শুরু হবে। মৌচাষের মাধ্যমে মধু উৎপাদনে ত্রিপুরাকে স্বনির্ভর করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে।”

খরিফ মৌসুম প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, ত্রিপুরায় ২.০১ লক্ষ হেক্টর জমিতে খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতি হেক্টরে ৫০০ কেজি উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলে, এ বছর রাজ্যে খাদ্যশস্য উৎপাদন ১ লক্ষ মেট্রিক টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। তিনি বলেন, “এই অভিযানের আসল সাফল্য তখনই পূর্ণ হবে, যখন কৃষকদের আয় ও উৎপাদন দুই-ই বৃদ্ধি পাবে।”

এই অভিযান ত্রিপুরার কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে এবং রাজ্যকে কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version