নিউজ ডেস্ক || বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র বৈশাখী বুদ্ধ পূর্ণিমা উৎসবে অংশ নিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলির উন্নয়নে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আগরতলার বেনুবন বুদ্ধ বিহারে আয়োজিত এই উৎসবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সকল ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি রাজ্য সরকার গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে। ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবন দর্শন, চিন্তাধারা ও শান্তির বাণী সকলের জন্য শিক্ষণীয়।
এ বছর ২৫৬৯তম বুদ্ধ জয়ন্তী ও বৈশাখী বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বেনুবন বুদ্ধ বিহারে রাজ্যের মূল অনুষ্ঠানের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র দিন। এই দিনে নেপালের লুম্বিনীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রাজকুমার সিদ্ধার্থ, যিনি পরবর্তীতে গৌতম বুদ্ধ হিসেবে বুদ্ধত্ব লাভ করেন। তাঁর জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং মহাপরিনির্বাণ—এই ত্রয়ী ঘটনা বৈশাখী পূর্ণিমায় সংঘটিত হয়, যা এই দিনটিকে বিশ্ব শান্তির প্রতীক করে তুলেছে।
মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ত্রিপুরা এখন সন্ত্রাসমুক্ত রাজ্য। একসময় উগ্রপন্থার সমস্যা থাকলেও, আত্মসমর্পণের মাধ্যমে অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ বৈশাখী পূর্ণিমাকে ‘ভেসাক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়। বুদ্ধের অহিংসা, প্রেম, করুণা ও শান্তির বার্তা এই উৎসবের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস নেওয়া হয়।
ডাঃ সাহা গৌতম বুদ্ধের বাণীর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “যিনি অস্থির চিত্ত, যিনি সত্য ধর্ম অবগত নন, যার মানসিক প্রসন্নতা নেই, তিনি কখনো প্রাজ্ঞ হতে পারেন না।” তিনি আরো বলেন, প্রতিটি দিন নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে এবং জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতা আমাদের শিক্ষা দেয়।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত ১৩ মার্চ সাব্রুমের মনু বনকুলে মহামুনি উৎসবে তিনি ২৮টি বুদ্ধ মূর্তির উন্মোচন করেছেন। মনু বনকুলের মহামুনি বৌদ্ধ বিহার একটি পবিত্র তীর্থস্থান, যেখানে দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০ পর্যটক আসেন। রাজ্য সরকার এই বিহার এলাকাকে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী শুভকরানন্দ মহারাজ, ধম্মদীপা ইন্টারন্যাশনাল বুদ্ধিষ্ট ইউনিভার্সিটির আচার্য ড. ধম্মপিয়া, রাজ্য সরকারের সচিব উত্তম কুমার চাকমা, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক বিশাল কুমার এবং বেনুবন বিহারের অধ্যক্ষ খেমাচারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈশাখী পূর্ণিমার এই উৎসবে বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল, অষ্টশীল সূত্রপাঠ ও প্রার্থনার মাধ্যমে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের ধর্মীয় পর্যটন উন্নয়নের পরিকল্পনা ত্রিপুরাকে শান্তির তীর্থক্ষেত্র হিসেবে আরো সমৃদ্ধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।