নিউজ ডেস্ক || বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটি, ত্রিপুরা রাজ্য শাখার উদ্যোগে মঙ্গলবার রাজধানী আগরতলায় এক সচেতনতামূলক শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায়। শোভাযাত্রার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয় যে, আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে কলঙ্ক হিসেবে না দেখে সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)-র তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতিবছর প্রায় ১.৬ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে এই হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ত্রিপুরার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। ২০২৩ সালের এনসিআরবি রিপোর্ট অনুসারে, ত্রিপুরায় প্রতি ১০০,০০০ জনে আত্মহত্যার হার ২০.৮, যা জাতীয় গড়ের প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়া, রাজ্যে আনুমানিক মাসে ১৬ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন। ২০২২ সালের তথ্যে দেখা যায়, উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে ত্রিপুরায় আত্মহত্যার হার ১৭%, যা মিজোরাম (১২.৪%), আসাম (৯.৪%), মেঘালয় (৬.৪%), নাগাল্যান্ড (২.২%), এবং মণিপুর (০.৮%)-এর তুলনায় অনেক বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক চাপ, বেকারত্ব, পারিবারিক অশান্তি, আসক্তি এবং মানসিক রোগের মতো কারণগুলি এই প্রবণতার জন্য দায়ী। প্রাথমিক পর্যায়ে মানসিক সমস্যার চিকিৎসা ও সামাজিক সহায়তার অভাব অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে সমাজের সব স্তরের মানুষকে একত্রিত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
ত্রিপুরা সরকার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জেলা হাসপাতালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ, স্কুল-কলেজে কাউন্সেলিং সেল চালু করা এবং গ্রামীণ এলাকায় সচেতনতা শিবির আয়োজন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। তবে, চিকিৎসকের ঘাটতি, পর্যাপ্ত হেল্পলাইন পরিষেবার অভাব এবং মানসিক অসুস্থতা নিয়ে সামাজিক কুসংস্কার এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির ত্রিপুরা শাখার সদস্যরা জানান, এই ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ তৈরি করবে এবং আত্মহত্যার হার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।