নিউজ ডেস্ক || ত্রিপুরার রেল ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো শুক্রবার, যখন প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক লোকোমোটিভে চালিত জন শতাব্দী এক্সপ্রেস (ট্রেন নম্বর ১২০৯৮ DN) সকাল ছয়টায় আগরতলা স্টেশন থেকে অরুণাচলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল ও রেলওয়ে পুলিশ ফোর্সের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে এই ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হয়, যা ত্রিপুরার রেল অবকাঠামোর জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এর আগে, চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আসামের বদরপুর এবং ত্রিপুরার জিরানিয়া স্টেশনের মধ্যে বৈদ্যুতিক লোকোমোটিভে চালিত প্রথম পণ্যবাহী ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। সম্প্রতি দক্ষিণ আসাম ও ত্রিপুরায় রেলপথের বিদ্যুতায়ন এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এই রুটে নিয়মিত বৈদ্যুতিক যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর পথ প্রশস্ত হয়েছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা বৈদ্যুতিক লোকোমোটিভে চালিত যাত্রীবাহী ট্রেন নিয়মিত চালানোর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।”
বর্তমানে ত্রিপুরা দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই, ফিরোজপুর, পাটনা সহ দেশের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেনের মাধ্যমে সংযুক্ত। তবে এতদিন এই রুটে শুধু ডিজেলচালিত ট্রেনই চলত। ২০২২ সালে ৪৬ কোটি টাকার একটি বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ত্রিপুরাকে জাতীয় রেলওয়ে গ্রিডের সঙ্গে বৈদ্যুতিক ট্রেনের মাধ্যমে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই প্রকল্পে রেলওয়ের বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ কর্পোরেশন লিমিটেড।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক রেললাইনের অবকাঠামো প্রস্তুত হওয়ায় শীঘ্রই আইকনিক বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন আসামের শিলচর এবং আগরতলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। উল্লেখ্য, ২৯ মে, ২০২৩-এ প্রধানমন্ত্রী আসামে প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সূচনা করেন, যা গুয়াহাটিকে নিউ জলপাইগুড়ির সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
বৈদ্যুতিক রেল পরিষেবার এই রূপান্তর দ্রুত ভ্রমণ, কম খরচ, এবং সম্প্রসারিত বাণিজ্য সুযোগ নিশ্চিত করবে। এছাড়া, দক্ষতা ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে ত্রিপুরায় শিল্পায়ন, পর্যটন, এবং বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ ত্বরান্বিত হবে। এই আধুনিক রেল অবকাঠামো বিনিয়োগ আকর্ষণ করে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করবে।
এই বৈদ্যুতিক রেল যুগের সূচনা ত্রিপুরার জন্য শুধু একটি পরিবহন বিপ্লব নয়, বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত।
