কুমারঘাটে আনারস উৎসব: ৭৩.১৫ মেট্রিক টন আনারস রপ্তানি, জিআই ট্যাগ ও ফল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের উদ্যোগ
নিউজ ডেস্ক || ত্রিপুরার কৃষি খাতে নতুন মাইলফলক স্থাপনের পথে এগিয়ে চলেছে রাজ্য সরকার। গত সাত বছরে রাজ্য থেকে ৭৩.১৫ মেট্রিক টন আনারস দুবাই, ওমান ও কাতারে রপ্তানি করা হয়েছে। এছাড়াও, ৪.৪০ মেট্রিক টন কাঁঠাল আমেরিকায়, ৩০ মেট্রিক টন আদা এবং ১৭ মেট্রিক টন পান বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। শুক্রবার উত্তর জেলার কুমারঘাটের গীতাঞ্জলি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আনারস উৎসবে এই তথ্য জানান কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী রতন লাল নাথ।
মন্ত্রী জানান, ২০১৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আনারসকে ত্রিপুরার রাজ্যিক ফল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রাজ্যে প্রধানত কিউ এবং কুইন জাতের আনারস উৎপাদিত হয়, যা স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। কুইন আনারস ইতিমধ্যে জিআই ট্যাগ পেয়েছে, যা এর স্বতন্ত্রতা সুরক্ষিত করেছে। রাজ্যে মোট ৩.৬৫ লক্ষ কানি জমিতে ফলের চাষ হয়, যার মধ্যে ৭৪,০০০ কানিতে আনারস চাষ হয়। ধলাই, উনকোটি ও উত্তর জেলায় ৫৩,৭০০ কানিতে কিউ জাত এবং ২২,০০০ কানিতে কুইন জাতের আনারস উৎপাদিত হয়।
কৃষকদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্য সরকার নলকাটায় পিপিপি মডেলে একটি ফল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়া, সিদল শুকনো মাছ, সাবরি কলাসহ বিভিন্ন স্থানীয় পণ্যের জন্য জিআই ট্যাগ অর্জনের উদ্যোগ চলছে। মন্ত্রী জানান, ২০১৮ সালে আনারসের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৮-৯ টাকা, যা এখন বেড়ে গড়ে ৪০ টাকা বা তার বেশি হয়েছে। কুইন আনারসকে বিশ্ববাজারে জনপ্রিয় করতে কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রকের সঙ্গে ১৩২ কোটি টাকার প্রকল্পের পরিকল্পনা চলছে।
গত ৯ জুলাই আগরতলায় একটি ক্রেতা-বিক্রেতা মিটের আয়োজন করা হয়, যাতে রাজ্যের বাইরের ক্রেতারা ত্রিপুরার কৃষকদের উৎপাদিত ফসল কিনতে পারেন। এটি কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। মন্ত্রী এদিন কুমারঘাটের একটি আনারস প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে তপশিলিজাতি কল্যাণমন্ত্রী সুধাংশু দাস বলেন, ত্রিপুরার আনারস শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সমাদৃত। এগ্রি অ্যালায়েড সেক্টরে উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি আনারস উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কৃষকদের আয় বৃদ্ধির উপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে বিধায়ক ভগবান চন্দ্র দাস, ডোনার মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব অংশুমান দে, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, ইয়ং ডার্লং অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়, যেখানে ৩১ জন স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। মন্ত্রী রতন লাল নাথ রক্তদাতাদের উৎসাহিত করেন।
ত্রিপুরার আনারস এখন বিশ্ববাজারে নিজের স্থান করে নিয়েছে, এবং রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ কৃষকদের আর্থিক সমৃদ্ধি ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।