নিউজ ডেস্ক || উত্তর ত্রিপুরা জেলার দামছড়ায় ইন্দ্রধনুষ গ্যাস গ্রিড লিমিটেড (আইজিজিএল)-এর গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তিপরা মথার প্রতিষ্ঠাতা ও এমডিসি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণের উস্কানিমূলক বক্তব্য ও সামাজিক মাধ্যমে তাঁর পোস্ট এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। অন্যদিকে, প্রশাসন জানিয়েছে, জমি অধিগ্রহণের জন্য ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলেও একটি পরিবার অতিরিক্ত অর্থের দাবিতে কাজে বাধা দিচ্ছে।
প্রদ্যোত আজ সকালে ফেসবুকে একটি পোস্টে দাবি করেন, দামছড়ার গরিব জনজাতি গ্রামবাসীরা আইজিজিএল কর্মকর্তা ও সরকারি কর্তৃপক্ষের হুমকির শিকার। তিনি দলীয় কর্মীদের “আদেশ” দিয়ে বলেন, “গ্রামে যান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, এবং আইন মেনে কাজ না হলে তদন্ত করুন।” পরে ফেসবুক লাইভে তিনি অভিযোগ করেন, গরিব জনজাতিদের জোর করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, মারধর ও নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি দলীয় কর্মী ও বিধায়কদের গরিবের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন, হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “অত্যাচার হলে চুপ করে বসে থাকব না।”
প্রদ্যোত একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে এক জনজাতি যুবক সরকারের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, তাঁদের জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি, এবং তাঁর বৃদ্ধ বাবা ভয়ে মৃত্যুর মুখে। এই ভিডিও ত্রিপুরায় তীব্র শোরগোল ফেলেছে।
কিন্তু উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক চাঁদনী চন্দ্রন সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, নর্থ ইস্ট গ্যাস গ্রিড প্রকল্পের অধীনে ত্রিপুরাকে অসম ও মিজোরামের সঙ্গে গ্যাস পাইপলাইনে যুক্ত করার কাজ চলছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তেইনেরিন ত্রিপুরা নামে এক ব্যক্তিকে এক কানি জমির জন্য ৩৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে, যা সরকারি মূল্য ২০ লক্ষ টাকার চেয়ে বেশি। তিনি সম্মতি দিয়ে স্বাক্ষর করলেও এখন ৯০ লক্ষ টাকা দাবি করছেন।
চাঁদনী জানান, এই প্রকল্পে কোনো উচ্ছেদের প্রশ্ন নেই, কারণ শুধু মাটির নিচে পাইপলাইন বসানো হবে। তিনি অভিযোগ করেন, তেইনেরিনের কন্যা মীনাক্ষী ত্রিপুরা দিল্লি থেকে মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছেন। প্রশাসন একাধিকবার আলোচনার চেষ্টা করলেও তাঁরা সাড়া দেননি। তবু, প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এডিসি নির্বাচনের আগে এই বিতর্ক রাজনীতির নোংরা খেলার অংশ হতে পারে। প্রদ্যোতের আবেগপ্রবণ বক্তব্য ও প্রশাসনের দাবির মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতও দ্বিধাবিভক্ত। এই ঘটনা ত্রিপুরার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।