দৈনিক ৪০ হাজার লিটার ক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক ডেয়ারি প্ল্যান্ট এর উদ্বোধন

রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করছে রাজ্য সরকার: মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা || রাজ্যে কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাণীসম্পদ এবং মৎস্য পালনে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। বিশেষ করে গ্রামীণ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। মানুষের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রাণীজ প্রোটিন উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আধুনিক ডেয়ারি প্ল্যান্ট স্থাপনের ফলে যেমন রাজ্যবাসীর দুগ্ধজাতীয় পণ্যের বাড়তি চাহিদা পূরণ হবে তেমনি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আজ বামুটিয়ায় গোমতী কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রোডিউসার্স ইউনিয়ন লিমিটেড এর দৈনিক ৪০ হাজার লিটার ক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক ডেয়ারি প্ল্যান্ট এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা। ৩.৫৭ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই আধুনিক ডেয়ারি প্ল্যান্ট নির্মাণে কেন্দ্রীয় সরকারের ১৯ কোটি ৪৮ লক্ষ এবং রাজ্য সরকারের ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করছে রাজ্য সরকার। আগামী ৫ বছরের মধ্যে রাজ্যকে দুধ, ডিম ও মাছ উৎপাদনে স্বয়ম্ভর করে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গো-পালনে উৎসাহিত করতে মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গোধন প্রকল্পে গো-পালকদের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহারের পাশাপাশি সেক্স সর্টেড সিমেন প্রয়োগের ফলে স্ত্রী বাছুরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রাণী সম্পদ বিকাশ যোজনায় গো-পালকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। গো-পালনের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে হাঁস ও মুরগি পালনেও সরকারী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রাণী পালকদের তাৎক্ষণিক সুবিধার্থে ভ্রাম্যমান মোবাইল ইউনিট এবং টোল ফ্রি নাম্বার ১৯৬২ চালু করা হয়েছে। এবারের রাজ্য বাজেটেও প্রাণী পালকদের সহায়তার সংস্থান রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে মহিলাদের আংশিদারিত্ব অনস্বীকার্য। এর গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহিলাদের স্বনির্ভরতার মাধ্যমে তাঁদের সশক্তিকরণে গুরুত্বআরোপ করেছেন। রাজ্যেও মহিলাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। টিআরএলএম এবং টিইউএলএম এর মাধ্যমে মহিলাদের নিয়ে স্ব সহায়ক দল গঠন করা হচ্ছে। রাজ্যে বর্তমানে ৫ লক্ষ্যের বেশি মহিলা স্ব সহায়ক দলের সাথে যুক্ত হয়ে নিজেদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় মহিলাদের স্ব নির্ভরতার লক্ষ্যে রাজ্যে ৯১ হাজারের বেশি লাখপতি দিদি তৈরী করা হয়েছে। তাঁদের ব্যবসার প্রসারে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া সমবায়ের মাধ্যমে বিশেষ করে দুগ্ধ শিল্পে মহিলাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে দুধ, ডিম, মাছ এবং মাংস উৎপাদন, প্রাপ্যতা এবং চাহিদার তথ্যও তুলে ধরে আলোচনা করেন। এর উৎপাদন আরও বাড়ানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রাণী সম্পদ বিকাশে তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর কাজ করার উপর বিশেষভাবে গুরুত্বআরোপ করেছেন। এক্ষেত্রে উন্নত গাভী পালন, তাঁদের সঠিক পরিচর্যা, রোগমুক্ত রাখতে সময় সময়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী। গো-পালকদের উৎসাহিত করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। দুধ যাতে নষ্ট না হয় তাই দুধ সংগ্রহ থেকে বিক্রি করা পর্যন্ত কোল্ড চেইন ব্যবস্থা রাখার কথা বলেন। এছাড়া বিপনন ব্যবস্থাকে উন্নত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। গ্রামীণ এলাকা থেকে দুধ সংগ্রহ এবং বিক্রয় ব্যবস্থার প্রসার হলে গো-পালকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

তিনি বলেন, রাজ্যে গোমতী ডেয়ারির সুনাম রয়েছে। গোমতী কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রোডিউসার্স ইউনিয়ন লিমিটেড এর দৈনিক ৪০ হাজার লিটার ক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক ডেইরি প্ল্যান্ট এর কাজ শুরু হলে এখানে গুণগতমান সম্পন্ন বিভিন্ন ধরণের দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন হবে। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার পাশাপাশি সিপাহীজলা, গোমতী এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার মানুষ উপকৃত হবেন।

অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মৎস্য, পশুপালন ও ডেয়ারি মন্ত্রক মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং (লালন সিং) বলেন, প্রধানমন্ত্রী পশুপালন ও মৎস পালনের মাধ্যমে মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছেন। ২০১৯ সালে কৃষি থেকে আলাদা করে মৎস ও পশুপালন মন্ত্রণালয় গঠন করেছেন। দেশে ৮ কোটির বেশি মানুষ পশুপালনের সাথে যুক্ত রয়েছেন। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার গরিব অংশের মহিলারা এর সাথে যুক্ত থাকার ফলে মহিলাদের স্ব নির্ভরতার লক্ষ্যে পশুপালনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অধিক পরিমানে দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যে আধুনিক আইবিএফ পদ্ধতির ব্যবহারকে গো-পালকদের কাছে সহজলভ্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। রাজ্যে ফুট, মাউথ ডিজিজ ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির প্রসারে গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। রাজ্যে দুগ্ধ শিল্পের প্রসারে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের তথ্যও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দুধ উৎপাদনে ভারত শীর্ষে রয়েছে। প্রতিবছর দেশে ৬ শতাংশ হারে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ত্রিপুরায়ও এই শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যে দুগ্ধ শিল্পের প্রসারে এবং মৎস উৎপাদনে আগামীদিনে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মৎস, প্রাণীসম্পদ ও ডেয়ারি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর এস পি সিং বাঘেল বলেন, এই আধুনিক প্ল্যান্ট স্থাপনের ফলে প্রতিদিন ৩০ হাজার লিটার দুধ এবং ১০ হাজার লিটার দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন হবে। এছাড়া তিনি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই দুধ উৎপাদন বাড়ানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী সুধাংশু দাস রাজ্যে প্রাণীপালকদের জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বিস্তারিত তুলে ধরেন। সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টায় রাজ্যে সমবায়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে ২৮৭টি সমবায় রয়েছে। এই সমবায়ের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ হচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গোমতী কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রোডিউসার্স ইউনিয়ন লিমিটেড এর চেয়ারম্যান রতন ঘোষ। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিধায়ক মিনা রানী সরকার, মৎস, পশুপালন ও ডেয়ারি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বর্ষা জোশি, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব কে শশীকুমার, প্রাণসম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধিকর্তা নীরজ কুমার চঞ্চল প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অতিথিগণ ডেয়ারি প্ল্যান্টটি ঘুরে দেখেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version