নয়াদিল্লিতে আচার্য শ্রী বিদ্যানন্দ জি মহারাজের শতবর্ষ উৎসব উদযাপিত

4 Min Read

আচার্য শ্রী বিদ্যানন্দ জি মহারাজের শতবর্ষ উৎসব: ভারতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের গৌরবময় উদযাপন

নিউজ ডেস্ক || প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে আচার্য শ্রী বিদ্যানন্দ জি মহারাজের শতবর্ষ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। এই ঐতিহাসিক উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই অনুষ্ঠান ভারতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের এক মহান মুহূর্ত, যা আচার্যের অমর প্রেরণায় উদ্দীপ্ত। তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এই পবিত্র অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, ২৮ জুন ১৯৮৭ সালে আচার্য শ্রী বিদ্যানন্দ জি মহারাজকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। এটি কেবল একটি উপাধি নয়, বরং জৈন ঐতিহ্যকে চিন্তা, শৃঙ্খলা এবং করুণার সঙ্গে সংযুক্ত করার এক পবিত্র ধারার সূচনা ছিল। তিনি বলেন, “এই শতবর্ষ উৎসব একটি যুগের স্মৃতি বহন করে এবং এক মহান সন্ন্যাসীর জীবনের প্রতিধ্বনি তুলে ধরে।” এই উপলক্ষে বিশেষ স্মারক মুদ্রা এবং ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আচার্য শ্রী প্রজ্ঞা সাগর জি-কে বিশেষভাবে সম্মান জানান, যিনি লক্ষ লক্ষ ভক্তকে আচার্যের দেখানো পথে চলার প্রেরণা দিচ্ছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে এই দিনে তাঁকে ‘ধর্ম চক্রবর্তী’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে, যা তিনি নম্রভাবে ভারত মাতার চরণে উৎসর্গ করেন।
আচার্য শ্রী বিদ্যানন্দ জি মহারাজ ১৯২৫ সালের ২২ এপ্রিল কর্ণাটকের পবিত্র ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জীবন জ্ঞান ও আনন্দের এক অনন্য সংমিশ্রণ ছিল। তিনি ১৫০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেন, হাজার হাজার কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যাত্রা করেন এবং লক্ষ লক্ষ যুবককে শৃঙ্খলা ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ‘যুগের দ্রষ্টা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তাঁর আধ্যাত্মিক আভায় নিজেকে ধন্য বলে উল্লেখ করেন।
মোদি বলেন, “ভারত বিশ্বের প্রাচীনতম জীবন্ত সভ্যতা। আমাদের দেশ হাজার হাজার বছর ধরে টিকে আছে কারণ এর চিন্তাধারা, দর্শন এবং বিশ্বদৃষ্টি চিরন্তন।” তিনি আচার্য শ্রী বিদ্যানন্দ জি মহারাজকে এই চিরন্তন ঐতিহ্যের আধুনিক প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেন। আচার্যের কন্নড়, মারাঠি, সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষায় দক্ষতা, সাহিত্য ও ধর্মে অবদান, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ভক্তি এবং জাতীয় সেবায় অটল প্রতিশ্রুতি তাঁকে এক বহুমুখী ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি জৈন দর্শনের ‘জৈন দর্শন’ ও ‘অনেকান্তবাদ’-এর মতো গ্রন্থ রচনা করে দার্শনিক চিন্তাধারাকে গভীরতর করেন এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, আচার্য শ্রী বিদ্যানন্দ জি মহারাজ প্রাকৃত ভাষার পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর ‘বচনামৃত’ আন্দোলন জৈন শাস্ত্রকে সাধারণ মানুষের ভাষায় উপস্থাপন করেছে। ২০২৪ সালে প্রাকৃত ভাষাকে শাস্ত্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া এবং জৈন শাস্ত্রের ডিজিটাইজেশনের মতো উদ্যোগ এই প্রচেষ্টারই ফল। তিনি আরও বলেন, সরকার উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে ভারতের সাংস্কৃতিক ও তীর্থস্থানগুলির উন্নয়নে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী শ্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত সহ বিশিষ্ট সাধু-সন্ত ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। ভগবান মহাবীর অহিংসা ভারতী ট্রাস্টের সহযোগিতায় সরকার এই শতবর্ষ উৎসবকে এক বছরব্যাপী সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক, শিক্ষাগত ও আধ্যাত্মিক উদ্যোগের মাধ্যমে উদযাপন করছে।
আচার্য শ্রী বিদ্যানন্দ জি মহারাজ জৈন দর্শন ও নীতিশাস্ত্রের উপর ৫০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি প্রাচীন জৈন মন্দিরের পুনরুদ্ধার, প্রাকৃত ভাষা, জৈন দর্শন ও শাস্ত্রীয় ভাষার শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এই শতবর্ষ উৎসব তাঁর জীবন ও উত্তরাধিকারকে সম্মান জানাতে এবং তাঁর বাণী প্রচারের লক্ষ্যে আয়োজিত হচ্ছে।
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version