পঞ্চায়েতীরাজ উদযাপন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী

5 Min Read

পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থা ভারতের গ্রামীণ প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তন্ত

আগরতলা || বর্তমানে সারা দেশের মধ্যে রাজ্যের পঞ্চায়েতী রাজ ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করেছে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি রাজোর গোমতী জেলা এবং ধলাই জেলার গঙ্গানগর ব্লক প্রাইম মিনিস্টার্স অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স ইন পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশান ২০২৪- এ পুরষ্কৃত হয়েছে।

দেশের সার্বিক উন্নতিতে পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। পঞ্চায়েত স্তরে উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ত্রিপুরা ৭টি জাতীয় পঞ্চায়েতী রাজ পুরষ্কার পেয়েছে। রাজ্যের উন্নয়ন সঠিক দিশায় চলছে বলেই দেশের প্রায় আড়াই লক্ষ পঞ্চায়েতের মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন পঞ্চায়েত জাতীয়ন্তরে পুরস্কৃত হচ্ছে। কাজের প্রতি সততা, নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা এবং স্বচ্ছতার জন্যই এটা সম্ভবপর হয়েছে। এই কৃতিত্ব সবার। আজ অরুন্ধুতিনগরের স্টেট পঞ্চায়েত রির্সোস সেন্টারের গ্রাম স্বরাজ ভবনে পঞ্চায়েতীরাজ দিবস উদযাপন উপলক্ষো আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা একথা বলেন। তিনি বলেন, পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থা ভারতের গ্রামীণ প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তন্ত। এই ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। কারণ স্থানীয় জনগণ এর সাথে সরাসরি যুক্ত হয়ে গ্রামস্তরে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জল, রাস্তা ইত্যাদি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের রূপরেখা তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর গ্রামোন্নয়নে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি সবসময় বলেন, গ্রামের উন্নতি ছাড়া দেশ ও রাজ্যের সার্বিক বিকাশ সম্ভব নয়।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে গত দু’বছরে ৪৪টি নতুন পঞ্চায়েত ভবন, ৪টি ডিস্ট্রিক্ট পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টার এবং ৮টি পঞ্চায়েত লার্নিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। ১৫টি পঞ্চায়েত সহ ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানের আইএসও-এর মর্যাদায় উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারে রাজ্যের প্রতিটি স্তরে ই-অফিস চালু হয়েছে। অনলাইন লেনদেন ও ইউপিআই পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু রয়েছে প্রতিটি পঞ্চায়েতে যা শুধু সময়োপযোগী পদক্ষেপই নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতীক। জনগণের সমস্যা নিরসনে রাজ্যে চালু ‘আমার সরকার’ পোর্টালটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পঞ্চায়েতগুলিকে মডেল পঞ্চায়েত হিসেবে গড়ে তুলতে চীফ মিনিস্টার মডেল ভিলেজ স্কিমের মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশিত পঞ্চায়েত ডিভলিউশান ইনডেক্স অনুযায়ী ত্রিপুরা দেশের মধ্যে সপ্তম স্থান দখল করেছে। যেখানে ২০১৫ সালে ত্রিপুরার স্থান ছিল ১৩তম। পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট ইন্ডেক্সেও রাজ্যের ৩৬ শতাংশ পঞ্চায়েত এ-ক্যাটাগরিতে রয়েছে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি সহ কর্মচারিদের দক্ষতা বৃদ্ধির উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাস্তবসম্মত এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং স্থায়ী সম্পদ তৈরির মাধ্যমে পঞ্চায়েতকে সাজিয়ে তোলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী জনপ্রতিনিধি সহ সকলকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। এজন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি এবং সমন্বয় বজায় রেখে কাজ করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে ৩ হাজার ৫০০টি স্বসহায়ক দলকে শক্তিশালী করতে রিভলবিং ফান্ড এবং ৪ হাজার ৫০০টি স্বসহায়ক দলকে একটি কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড প্রদান করার জন্য অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে। তাছাড়াও আরজিএসএ-এর অধীনে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ডিস্ট্রিক্ট পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টার গড়ে তোলার বিষয়টি বাজেটে রয়েছে। রাজ্যের ২৭টি পঞ্চায়েতের প্রতিটিতে একটি করে পঞ্চায়েত লার্নিং সেন্টার এবং ৬১টি পঞ্চায়েত ভবন নির্মাণ করা হবে।

অনুষ্ঠানে রাজ্যের ৮টি জেলার জেলা সভাধিপতিগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট শিলং-এর অধিকর্তা প্রফেসর নলিনি প্রভা ত্রিপাঠি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্রামোন্নয়ন (পঞ্চায়েত) দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন দপ্তরের অধিকর্তা প্রসূন দে। অনুষ্ঠানে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, শিলং-এর সাথে পঞ্চায়েত দপ্তরের প্রশিক্ষণ বিষয়ক একটি মউ স্বাক্ষরিত হয়। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, শিলং-এর পক্ষ থেকে অধিকর্তা এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে গ্রামোন্নয়ন (পঞ্চায়েত) দপ্তরের সচিব মউ স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে স্টেট পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টারের স্মার্ট অফিস, মাসিক পুস্তিকা গ্রামীণ সৃজন, দপ্তরের বাৎসরিক পুস্তিকার আবরন উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রীর সহ অতিথিগণ। তাছাড়া রাজ্যের সবকয়টি পঞ্চায়েতকে এদিন দিব্যাঙ্গন বান্ধব পঞ্চায়েত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতিতে পুরষ্কার দেওয়া হয়। রাজ্যস্তরে উৎকৃষ্ট কাজের জন্য সেরা ৩টি ব্লকের মধ্যে রাজনগর প্রথম স্থান, হেজামারা দ্বিতীয় এবং অমরপুর ব্লক তৃতীয় স্থান পেয়েছেন। পাশাপাশি সেরা ৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে হেজামারা ব্লকের পূর্ব তমাকারি ভিলেজ কমিটি প্রথম, পদ্মবিল ব্লকের মারে হাদুক ভিলেজ কমিটি দ্বিতীয় এবং অমরপুর ব্লকের পশ্চিম ডালাক গ্রাম পঞ্চায়েত তৃতীয় হয়েছে। জলবায়ু বিষয়ক এবং আত্মনির্ভর বিশেষ বিভাগে সেরা তিনটি পঞ্চায়েত, সেরা তিনজন অফিসিয়ালকেও এদিন পুরস্কৃত করা হয়। ই-গভর্নেন্স বিভাগে জিরানিয়া ব্লকের পশ্চিম মজলিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত পুরস্কার লাভ করে। মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগন সংশ্লিষ্টদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version