পাক-অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত থামবে না ভারতীয় সেনা: মোদী

3 Min Read

গান্ধীনগরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কড়া বার্তা: দেশভাগের জেরে ৭৫ বছর ধরে সন্ত্রাসবাদ, পাকিস্তানের ছায়াযুদ্ধের জবাব দেবে ভারত

নিউজ ডেস্ক || গুজরাটের গান্ধীনগরে গুজরাট নগর বিকাশ আখ্যানের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সমারোহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশভাগের পর থেকে চলমান সন্ত্রাসবাদের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় সেনার এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল, যে পরামর্শ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দেওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন সময়ে আমলে নেওয়া হয়নি। পহেলগামে জঙ্গী হামলার মতো ঘটনাগুলো এরই পরিণতি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মঞ্চ থেকে নগর বিকাশ বর্ষ ২০২৫-এর সূচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত দুই দিনে ভদোদরা, দাহোদ, ভুজ, আমেদাবাদ ও গান্ধীনগর সফরে তিনি অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য ও দেশপ্রেমের উৎসব প্রত্যক্ষ করেছেন। এই চেতনা কেবল গুজরাটে সীমাবদ্ধ নয়, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর প্রথম জঙ্গী হামলার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ভারত তখন কার্যত তিন ভাগে বিভক্ত হয়েছিল। পাকিস্তান ধারাবাহিকভাবে জঙ্গীদের প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে। সর্দার প্যাটেলের দূরদর্শী পরামর্শ উপেক্ষিত হওয়ায় ৭৫ বছর ধরে সন্ত্রাসবাদ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান কূটনৈতিক চাল চাললেও ভারতের সামরিক শক্তির মুখে সরাসরি যুদ্ধে হার মানতে বাধ্য হয়েছে। ফলে তারা ছায়াযুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে, সাধারণ মানুষ ও তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়ে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ৬ মে’র ঘটনার পর পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। মাত্র ২২ মিনিটে জঙ্গীদের ৯টি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে, যা ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। পাকিস্তানের সুচতুর কৌশল এবং জঙ্গীদের শেষকৃত্যে পাক সেনা আধিকারিকদের উপস্থিতি থেকে স্পষ্ট যে ইসলামাবাদ একটি সুনির্দিষ্ট যুদ্ধ পরিকল্পনা করছে। এর যথাযথ জবাব দেওয়া হবে বলে তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দেন।

‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর ধারণার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত শান্তির পথে থাকলেও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় জোরালো জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিতের প্রসঙ্গে বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিন অবহেলিত। বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ ও জলাধারের পলি খনন না হওয়ায় জল সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। ভারতীয়দের জলের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করা হবে বলে তিনি জানান।

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় ভারত অর্থনীতিতে বিশ্বে ১১তম স্থানে ছিল। কোভিড-১৯, প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে বিরোধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারত এখন চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। গুজরাটের নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের দায়বদ্ধতার প্রশংসা করে তিনি বলেন, আগামী ২৫ বছরে ১৪০ কোটি ভারতীয় উন্নত ভারত গঠনে সক্ষম হবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপারেশন সিঁদুর জাতীয় প্রগতির প্রতীক হয়ে উঠবে। তিনি বিদেশী পণ্যের উপর নির্ভরতা কমিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। ভারতকে বিশ্বের মঞ্চে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করা প্রতিটি নাগরিকের লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই বক্তৃতা ভারতের শান্তি, সমৃদ্ধি ও সামরিক শক্তির প্রতি অঙ্গীকারের পাশাপাশি পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তা দিয়েছে। গুজরাটের বিকাশ যাত্রা এবং অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য দেশের উন্নত ভবিষ্যতের প্রতি আস্থা জাগিয়েছে।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version