বিকশিত কৃষি সংকল্প: ত্রিপুরার কৃষিতে নতুন দিগন্ত

3 Min Read

ত্রিপুরায় বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযানের সাফল্য: কৃষকদের মাঝে নতুন আশার আলো

নিউজ ডেস্ক || রাজ্যের কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে গতকাল ১২ জুন শেষ হলো ‘বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান’। গত ২৯ মে থেকে শুরু হওয়া এই পনেরো দিনব্যাপী মেগা কর্মসূচি সারা দেশের সঙ্গে ত্রিপুরাতেও কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আজ নাগিছড়ায় হর্টিকালচার রিসার্চ সেন্টারে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ এই অভিযানের বিস্তারিত তথ্য ও সাফল্য তুলে ধরেন।

কৃষিমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন কৃষিক্ষেত্রে ভারতকে আধুনিক ও স্থিতিশীল ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের শস্যভাণ্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘এক দেশ, এক কৃষি, এক ভাবনা’ নীতির আলোকে ২০২৫-২৬ সালে কৃষি বাজেট পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধির আওতায় দেশের ১১ কোটিরও বেশি কৃষককে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে ত্রিপুরার ২ লক্ষ ৮৪ হাজার কৃষক পেয়েছেন ৮৪৪ কোটি টাকা। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় রাজ্যের ১৪ লক্ষ ১৪ হাজার ৪৯৭ কৃষক গত ৭ বছরে ১০ কোটি ১৭ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা পেয়েছেন।

এই অভিযানের মাধ্যমে সারা দেশের ৭০০ জেলায় ১.৫ কোটি কৃষকের কাছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরায় ১ লক্ষ ৭২ হাজার কৃষকের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ২৬৩ জন কৃষকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে, যার মধ্যে ৬৬ হাজার ৮০৯ জন মহিলা কৃষক। রাজ্যে ৮৬৪টি সভার পরিকল্পনার বিপরীতে ৯৫৬টি গ্রাম ও পঞ্চায়েতে ৮৭৩টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া, ২৪টি কৃষি রথ কৃষি বিষয়ক প্রচারে অংশ নিয়েছে।

মন্ত্রী জানান, এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ কমানো, ফসলের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, শস্য বৈচিত্র্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে গুরুত্বারোপ এবং জৈব ও প্রাকৃতিক চাষে উৎসাহ প্রদান। কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি, বিজ্ঞানসম্মত চাষ পদ্ধতি ও জৈব চাষের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে।

ত্রিপুরায় খাদ্যশস্যের চাহিদা ৯ লক্ষ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন, যার মধ্যে উৎপাদন হয় ৮ লক্ষ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে রাজ্যের ৫৮টি ব্লকের মধ্যে ৩০টি এবং তিনটি জেলা (সিপাহিজলা, দক্ষিণ ত্রিপুরা ও গোমতী) খাদ্যশস্যে স্বয়ম্ভর। ধলাই ও খোয়াই জেলা অচিরেই স্বয়ম্ভর হবে বলে মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের ১০ জন উদ্ভাবনী কৃষককে ১০ হাজার টাকা করে পুরস্কৃত করা হয়। মন্ত্রী বলেন, “এই অভিযানের সাফল্য ত্রিপুরাকে কৃষিতে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। বিজ্ঞানভিত্তিক চাষের মাধ্যমে প্রতি হেক্টরে ৫০০ কেজি ফলন বৃদ্ধি করতে পারলে রাজ্যের খাদ্যশস্য উৎপাদন ১ লক্ষ মেট্রিক টন বাড়ানো সম্ভব।”

এই অভিযান ভারতীয় কৃষি গবেষণা পরিষদ (আইসিএআর), রাজ্যের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং কৃষি ও উদ্যান দপ্তরের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version