বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারসাম্যের নতুন খেলা: মোদীর জাপান-চীন সফর ও ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ

3 Min Read
নিউজ ডেস্ক || ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বর্তমানে জাপান সফরে রয়েছেন, যেখানে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার বার্তা দিয়েছেন। টোকিওতে ১৫তম ভারত-জাপান বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে আজ তাঁরা মুখোমুখি হবেন। এই সফরে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর এবং পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মোদী ইন্দো-জাপান ইকোনমিক ফোরামে অংশ নিয়ে ভারতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা তুলে ধরেছেন, বলেন, “বিশ্ব শুধু ভারতের দিকে তাকিয়ে নেই, ভারতের ওপর ভরসাও করছে।”
এই সফরের মধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পালাবদল নিয়ে মার্কিন অর্থনীতিবিদ রিচার্ড উল্ফ গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি এক পডকাস্টে বলেন, “ব্রিকস দেশগুলি বৈশ্বিক উৎপাদনের ৩৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে, যেখানে জি৭-এর অংশ মাত্র ২৮ শতাংশ। ভারত যখন রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ প্রত্যাখ্যান করে, তখন এটা স্পষ্ট যে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বদলাচ্ছে।” তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির কড়া সমালোচনা করে বলেন, “এই নীতি ব্যর্থ। এটি ভারত, চীন ও ব্রাজিলের মতো ব্রিকস দেশগুলিকে আরও ঘনিষ্ঠ করছে এবং পশ্চিমা বিশ্ব থেকে দূরে সরাচ্ছে।”
ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যার ফলে মোট শুল্ক ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর জবাবে মোদী স্পষ্ট করেছেন, “ভারতের কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসার স্বার্থে কোনও আপস করা হবে না। এই শুল্ক অন্যায্য ও অবিচারসুলভ।” উল্ফ আরও সতর্ক করেন যে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করছে এবং আমেরিকার ঋণ ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ডলারের উপর আন্তর্জাতিক আস্থা কমিয়ে দিতে পারে।
জাপান সফর শেষে মোদী ৩১ আগস্ট চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন, যা সাত বছরে তাঁর প্রথম চীন সফর। এই সফরে ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতি এবং বাণিজ্য ও সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাস নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। মোদী জাপান থেকে বলেন, “ভারত ও চীনের স্থিতিশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির চাপের মধ্যে ভারত জাপান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। মোদীর এই সফর বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা এবং ব্রিকস জোটের প্রভাব বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version