ভারত-অ্যাঙ্গোলা সম্পর্কের নতুন দিগন্ত, আফ্রিকার সঙ্গে বন্ধুত্বের নতুন অধ্যায়

নিউজ ডেস্ক || ভারতের প্রধানমন্ত্রী অ্যাঙ্গোলার রাষ্ট্রপতি জোয়াও লরেঞ্চো এবং তাঁর প্রতিনিধি দলকে ভারতে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। ৩৮ বছর পর অ্যাঙ্গোলার রাষ্ট্রপতির এই সফর ভারত-অ্যাঙ্গোলা সম্পর্ককে নতুন গতি ও দিশা প্রদান করছে এবং ভারত-আফ্রিকা অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করছে। এই বছর দুই দেশ তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন করছে, যদিও তাদের বন্ধুত্বের শিকড় আরও গভীর ও প্রাচীন।

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, অ্যাঙ্গোলার স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারত পূর্ণ বিশ্বাস ও বন্ধুত্বের সঙ্গে তাদের পাশে ছিল। আজ ভারত অ্যাঙ্গোলার তেল ও গ্যাসের অন্যতম বৃহৎ ক্রেতা। দুই দেশ এখন তাদের শক্তি অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অ্যাঙ্গোলার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা ঋণ সুবিধা অনুমোদন করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা প্ল্যাটফর্মের মেরামত, সরবরাহ এবং অ্যাঙ্গোলার সশস্ত্র বাহিনীর প্রশিক্ষণে ভারত সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

উন্নয়ন অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে ভারত অ্যাঙ্গোলার সঙ্গে ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার, মহাকাশ প্রযুক্তি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। স্বাস্থ্যসেবা, হীরা প্রক্রিয়াকরণ, সার এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ খাতে সম্পর্ক আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অ্যাঙ্গোলায় যোগ এবং বলিউডের জনপ্রিয়তা দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতীক। জনগণের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করতে একটি যুব বিনিময় কর্মসূচি শুরু করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

অ্যাঙ্গোলার আন্তর্জাতিক সৌর জোটে যোগদানের সিদ্ধান্তকে ভারত স্বাগত জানিয়েছে। এছাড়া, অ্যাঙ্গোলাকে ভারতের উদ্যোগ যেমন কোলিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার, বিগ ক্যাট অ্যালায়েন্স এবং গ্লোবাল বায়োফুয়েল অ্যালায়েন্সে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সন্ত্রাসবাদকে মানবতার সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে দুই নেতা একমত হয়েছেন। পাহালগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি শোক জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি লরেঞ্চো এবং অ্যাঙ্গোলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সীমান্ত-পার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে অ্যাঙ্গোলার সমর্থনের জন্যও ধন্যবাদ জানানো হয়।

আফ্রিকান ইউনিয়নের সভাপতিত্বের জন্য অ্যাঙ্গোলাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বকালে আফ্রিকান ইউনিয়নের স্থায়ী সদস্যপদ অর্জন গর্বের বিষয়। গত দশকে ভারত ও আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা গতি পেয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। প্রতিরক্ষা ও সমুদ্র নিরাপত্তায় অগ্রগতি হয়েছে। গত মাসে ভারত ও আফ্রিকার মধ্যে প্রথম নৌ-মহড়া ‘আক্যাম’ অনুষ্ঠিত হয়। গত ১০ বছরে আফ্রিকায় ১৭টি নতুন ভারতীয় দূতাবাস খোলা হয়েছে। আফ্রিকার জন্য ১২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সুবিধা এবং ৭০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

অ্যাঙ্গোলার নেতৃত্বে ভারত ও আফ্রিকান ইউনিয়নের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলে প্রধানমন্ত্রী আত্মবিশ্বাসী। ভারত ও আফ্রিকান ইউনিয়ন গ্লোবাল সাউথের প্রগতির সঙ্গী এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধি হিসেবে একসঙ্গে কাজ করছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version