মহালয়ার সুরে মুখরিত আগরতলা: দেবীপক্ষের আগমনী বার্তায় উৎসবের আমেজ

2 Min Read

আগরতলায় মহালয়ার ভোর: পিতৃপক্ষের বিদায়, দেবীপক্ষের সূচনা

নিউজ ডেস্ক || মহালয়ার পবিত্র ভোরে রাজধানী আগরতলায় ছড়িয়ে পড়েছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী বার্তা। শরতের হিমেল বাতাস, কাশফুলের দোলা আর আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় যেন উৎসবের রঙ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাঙালির জীবনে মহালয়া শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি এক গভীর সাংস্কৃতিক আবেগ, যা আজ আগরতলার প্রতিটি কোণে প্রতিফলিত হয়েছে।

সকালের প্রথম আলোয় আগরতলার রাস্তাঘাটে দেখা গেছে উৎসবমুখর জনতার ভিড়। কলেজ টিলার প্রাত ভবনে ভোর থেকেই জমায়েত হয়েছেন সাধারণ মানুষ। দেবীপক্ষের আনুষ্ঠানিক সূচনার পাশাপাশি পিতৃপক্ষের সমাপ্তি উপলক্ষে লক্ষ্মীনারায়ণ বাড়ির দিঘি সহ বিভিন্ন জলাশয়ে তর্পণের আয়োজন চোখে পড়েছে। পুরোহিতদের মন্ত্রোচ্চারণে মুখরিত পরিবেশে মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল ও নৈবেদ্য নিবেদন করেছেন। এই আধ্যাত্মিক আচারের মাধ্যমে পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়েছে।

ভোরবেলার ভক্তিমূলক সংগীত ও চণ্ডীপাঠের ধ্বনি শহরের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে দিয়েছে উৎসবের আবেশ। তবে অনেকে আক্ষেপ করেছেন, একসময়ের বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে রেডিওতে শোনা ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সেই ঐতিহ্য এখন আর নেই। সময় বদলালেও মহালয়ার সঙ্গে বাঙালির আবেগ অটুট রয়েছে। রাস্তাঘাটে, পার্কে, এমনকি চায়ের দোকানেও আজ মহালয়া ও দুর্গাপূজার আলোচনায় মুখর মানুষ।

মহালয়ার এই দিনে মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততাও তুঙ্গে। দুর্গাপূজার প্যান্ডেলে দেবীমূর্তি গড়ার কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। শিল্পীরা রঙ তুলির শেষ ছোঁয়ায় ব্যস্ত, যেন মায়ের আগমনের জন্য প্রস্তুত হয় প্যান্ডেলগুলি। এই দিনটি শিল্পীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে, কারণ এখান থেকেই শুরু হয় পূজার চূড়ান্ত প্রস্তুতির ধুম।

মহালয়ার এই দিনে আগরতলায় শুধু ধর্মীয় আচারই নয়, উৎসবের আনন্দও উপচে পড়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকলের মনে আজ উৎসবের উচ্ছ্বাস। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে বেড়াতে বেরিয়েছেন, আড্ডায় মেতেছেন পূজার পরিকল্পনায়। আগরতলার প্রতিটি কোণ আজ রঙিন হয়ে উঠেছে উৎসবের আলোয়, ভরে উঠেছে আনন্দ, আবেগ আর ঐতিহ্যের অপূর্ব মেলবন্ধনে।

মহালয়া শুধু একটি দিন নয়, এটি বাঙালির হৃদয়ের এক অবিনাশী আবেগ, যা আগরতলার রাস্তায়, ঘাটে, প্যান্ডেলে আজ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version