রাজ্যস্তরীয় শিক্ষক দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা: শিক্ষকরাই জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর

3 Min Read
রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আজ ৬৪তম রাজ্যস্তরীয় শিক্ষক দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। এই উপলক্ষে তিনি বলেন, শিক্ষক সমাজই ছাত্রছাত্রীদের জীবনের পথপ্রদর্শক, উপদেষ্টা এবং ভবিষ্যৎ গঠনের মূল কারিগর। পিতামাতার পর শিক্ষকদের অবদান সর্বাগ্রে। তাঁরা নীতিশিক্ষা, শিষ্টাচার ও ন্যায়বোধের শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন, যারা ভবিষ্যতে রাজ্য ও দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান ছিলেন একজন মহান দার্শনিক ও শিক্ষক, যিনি শিক্ষকতার পেশাকে গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করতেন। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষকতার মহান দায়িত্বের শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ছাত্রছাত্রীদের বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষা দিতে হবে এবং তাদের ভালো কাজে উৎসাহিত করতে হবে। এতে তারা জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহসী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা, যার সঙ্গে অন্য কোনো পেশার তুলনা হয় না। শিক্ষকদের সমর্পণ ও মানসিক শক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি হয়, যা একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। তিনি শিক্ষকদের নিজেদের সেরাটা দেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. অতুল দেববর্মাকে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পুরস্কার, ডি সি পাড়া হেমন্ত স্মৃতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা প্রণতী দেববর্মাকে মহারানী তুলসীবতি পুরস্কার এবং শিক্ষাবিদ সমীর চক্রবর্তীকে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া রাজ্যের ৩৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ‘শিক্ষক সম্মাননা ২০২৫’ দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের রোল মডেল এবং সমাজ গঠনের শিকড়স্বরূপ। তিনি প্রাচীন ভারতের জ্ঞান ও বিজ্ঞানের গৌরবের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। রাজ্যে শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক কাজ চলছে। বর্তমানে রাজ্যে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, এমবিবিএস, ডেন্টাল, নার্সিং, ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় চালুর প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলেছে। এছাড়া ৩৮৭টি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে এবং আরও ২৯২টির কাজ চলছে। কন্যা আত্মনির্ভর যোজনায় ১৪০ জন ছাত্রীকে স্কুটি এবং নবম শ্রেণির ১,২২,৫০৯ জন ছাত্রীকে বিনামূল্যে সাইকেল দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার বলেন, শিক্ষকদের শিক্ষাদানের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানভিত্তিক ও উদ্ভাবনী শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, তাই শিক্ষকদেরও নিজেদের আপডেট রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ও তাঁর দর্শন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন সি শর্মা।
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version