সাইবার জালিয়াতির জালে ত্রিপুরা: ৫১ কোটির বেশি টাকা লুট, সতর্কতার আহ্বান ত্রিপুরা পুলিশের

3 Min Read
নিউজ ডেস্ক || সাইবার জালিয়াতির ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে ভারত বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, এবং ত্রিপুরাও এই অপরাধের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ত্রিপুরা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৫১ কোটি ৪৯ লক্ষ ৩৩ হাজার ৩০৩ টাকার সাইবার জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে। তবে, ত্রিপুরা পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ ধ্যানকর জানিয়েছেন, জনসচেতনতার মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধের প্রবণতা ক্রমশ কমছে। তিনি রাজ্যবাসীর প্রতি আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার ত্রিপুরা পুলিশের মুখ্য কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সাইবার জালিয়াতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়। পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভুয়ো বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিল, আরটিও চালান, ট্রেডিং গ্রুপের নামে বিনিয়োগ প্রতারণা, পুলিশ বা আয়কর আধিকারিকদের ভুয়ো পরিচয়ে ডিজিটাল এরেস্ট, ওটিপি চুরি, সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাক, যৌন নির্যাতন, ভুয়ো ফ্র্যাঞ্চাইজি, লটারি, ওএলএক্স, কুরিয়ার এবং হোটেল বুকিংয়ের নামে জালিয়াতির অভিযোগ বাড়ছে।
মহানির্দেশক জানান, এই অপরাধের মূল চ্যালেঞ্জ হলো অপরাধীরা অন্য রাজ্য বা দেশ থেকে ভুয়ো সিম কার্ড, ভিপিএন, এআই এবং ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তরা দেরিতে অভিযোগ জানানোয় অপরাধীদের ধরা কঠিন হয়ে পড়ছে।
পরিসংখ্যানে সাইবার জালিয়াতি:
  • ২০২৩ সালে সারা দেশে ৭৪৬৫ কোটি টাকা এবং ২০২৪ সালে ২২৮৪৫ কোটি টাকা লুট হয়েছে।
  • ত্রিপুরায় ২৬৯ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, মোট ক্ষতি ৫১.৪৯ কোটি টাকা।
  • এখন পর্যন্ত ৩৩.৮৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, এবং ৫.৭৬ কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে।
  • বছরভিত্তিক ক্ষতি: ২০২১-এ ১.৯৮ কোটি, ২০২২-এ ৪.৬২ কোটি, ২০২৩-এ ৯ কোটি, ২০২৪-এ ২৫.৫৪ কোটি এবং ২০২৫-এর জুলাই পর্যন্ত ৯.৭৭ কোটি টাকা।

উদাহরণে প্রতারণার চিত্র:

  • বিনিয়োগের নামে এক ব্যক্তি ২.৩ কোটি টাকা খুইয়েছেন।
  • ফ্র্যাঞ্চাইজির নামে ১৮ লক্ষ টাকার প্রতারণা।
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও কলের মাধ্যমে যৌন নির্যাতন ও অর্থ হাতানো।

ত্রিপুরা পুলিশের পরামর্শ:

  • শুধু প্রয়োজনীয় অ্যাপ ইনস্টল করুন, অব্যবহৃত অ্যাপ মুছে ফেলুন।
  • শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, একাধিক অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড এড়িয়ে চলুন।
  • কল বা এসএমএস ফরোয়ার্ডিং পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজনে বন্ধ করুন।
  • প্রতারণার শিকার হলে তাৎক্ষণিকভাবে ১৯৩০ নম্বরে রিপোর্ট করুন।
  • সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করবেন না, ওটিপি বা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।
  • সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে বিনিয়োগ প্রস্তাব থেকে সাবধান থাকুন।
  • মোবাইলের জিপিএস, ব্লুটুথ, এনএফস/si আপডেট রাখুন এবং প্রয়োজন ছাড়া বন্ধ রাখুন।

ত্রিপুরা পুলিশ জনসচেতনতা বাড়াতে ‘সাইবারডোস্ট’ ও তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে। মহানির্দেশক ধ্যানকর জোর দিয়ে বলেছেন, সতর্কতা ও সচেতনতাই এই অপরাধ রোধের মূল চাবিকাঠি।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version