১৯৮৪ শিখ দাঙ্গা: রাহুল গান্ধীর মন্তব্যে ফের বিতর্ক, বিজেপির পাল্টা আক্রমণ

3 Min Read

ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে রাহুল গান্ধীর মন্তব্যে শিখ দাঙ্গা নিয়ে নতুন বিতর্ক

নিউজ ডেস্ক || ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গা নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক মন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে এক অনুষ্ঠানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এক শিখ ছাত্রের তীক্ষ্ণ প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, “১৯৮০-এর দশকে যা হয়েছিল, তা ভুল ছিল।” এই মন্তব্যের পর বিজেপি তীব্র সমালোচনা করে রাহুলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণ শানিয়েছে।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় রাহুল গান্ধী ছাত্রদের সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নেন। এ সময় এক শিখ ছাত্র কংগ্রেসের শাসনামলে শিখ সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বর দমন এবং ১৯৮৪-এর দাঙ্গায় দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “আপনি নির্ভীক রাজনীতির কথা বলেন, কিন্তু কংগ্রেসের আমলে আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। আমরা শুধু পাগড়ি বা কড়া পরতে চাই না, আমাদের কথা বলার অধিকার চাই।” ছাত্রটি আরও অভিযোগ করেন, কংগ্রেস দাঙ্গার অভিযুক্ত সাজ্জন কুমারের মতো নেতাদের রক্ষা করেছে।

জবাবে রাহুল গান্ধী বলেন, তিনি সে সময় কংগ্রেসের নেতৃত্বে ছিলেন না, তবু অতীতের ভুলের দায় স্বীকার করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি জানান, “আমি বহুবার প্রকাশ্যে বলেছি, ৮০-এর দশকে যা হয়েছিল তা ভুল ছিল। আমি স্বর্ণমন্দিরে বহুবার গিয়েছি। শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো।” তিনি আরও বলেন, কংগ্রেস অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

তবে রাহুলের এই বক্তব্য নিয়ে বিজেপি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় রাহুলের ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, “এক শিখ ছাত্র রাহুল গান্ধীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস শিখদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেনি। শুধু ভারত নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও রাহুল গান্ধী এখন সমালোচনার মুখে।” মালব্য আরও দাবি করেন, রাহুলের পূর্ববর্তী মন্তব্যে শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে “ভিত্তিহীন ভয়” ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

১৯৮৪-এর শিখ-বিরোধী দাঙ্গা ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর সারা দেশে, বিশেষ করে দিল্লিতে, শিখ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক হিংসা সংগঠিত হয়। সরকারি হিসাবে দিল্লিতে ২,৮০০ এবং সারা দেশে ৩,৩৫০ জন শিখ নিহত হন, যদিও অন্যান্য সূত্রে মৃতের সংখ্যা ৮,০০০ থেকে ১৭,০০০ বলে দাবি করা হয়। এই ঘটনায় কংগ্রেসের ভূমিকা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

রাহুলের মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনা চলছে। কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, দল অতীতের ভুল স্বীকার করে শিখ সম্প্রদায়ের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। অন্যদিকে, বিজেপি এই ইস্যুকে পাঞ্জাবে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভবিষ্যতে কংগ্রেস কীভাবে এই স্পর্শকাতর বিষয়ে শিখ সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করে, তা দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

সূত্র: ব্রাউন ইউনিভার্সিটি অনুষ্ঠান, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version